কক্সবাজার: কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চিহ্নিত রাজাকার, শীর্ষ মানবপাচারকারী, ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ চিহ্নিত অপরাধীদের আটক করে প্রশংসা কুড়িয়েছিল যে সংস্থা, সেটি এখন স্থবির হয়ে পড়েছে।
গত ৭ মাস ধরে কোন অভিযান নেই কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের। ৪৭ সদস্যের সেই চৌকস দলটির পরিবর্তে মাত্র ৩ জন সদস্য নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংস্থাটির কার্যক্রম। জনবল সংকটে মাসের পর মাস ধরে গৃহবন্দি জেলা পুলিশের এ চৌকস ইউনিটটি।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২০ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী জেলার লালপোল এলাকা থেকে ৬ লক্ষ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব। এসময় ইয়াবা বহনের দায়ে গ্রেফতার করা হয় ঢাকার এসবি’র টেকনিক্যাল সেকশসনের এসআই মাহফুজুর রহমান ও তার গাড়িচালক জাবেদ আলীকে। পরবর্তীতে এসআই মাহফুজুরের জবানবন্দিতে ফেঁসে যায় কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই মো. বেলাল। আর এ ঘটনার সমস্ত দায়ভার পড়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওপর। ডিবি পুলিশের ইমেজ রক্ষায় ওই বছরের ২৩ জুন তৎকালীন ডিবি’র ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন সহ ১১ জনকে বদলি করা হয়। এরপর বদলি করা হয় বাকি সবাইকে।
সূত্র জানায়, ইয়াবা কেলেঙ্কারির আগে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ছিল ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট। একজন ওসির নেতৃত্বে ৬জন এসআই, ৮জন এএসআই ও ৩২জন কনস্টেবলের সমন্বয়ে গঠিত ছিল চৌকস দলটি। কিন্তু ২০১৫ সালের জুলাই মাসের মধ্যেই ওই ৪৭ জনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে শূন্যপদগুলো আর পূরণ করা হয়নি।
সেই থেকে একজন ওসি, একজন এসআই ও একজন কনস্টেবল দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জেলা ডিবি পুলিশ। মূলত তাদের কাজ সকাল বেলা অফিসে আসা, খোশগল্প করে অলস সময় কাটানো। এরপর সুযোগমত চলে যাওয়া।
এ বিষয়ে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ওসি মহসিন ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, ৭ মাস আগে একজনের অপরাধের কারণে সংস্থাটিতে তৎকালীন সময়ে কর্তব্যরত সকলকে অন্যত্র বদলি করা হয়। সেই থেকে একজন ওসি, একজন এসআই ও একজন কনস্টেবল দিয়ে চলছে সংস্থাটির কার্যক্রম। একজনের ব্যক্তিগত অপরাধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মূলত অফিসার ও সিপাহীর অভাবে অলস সময় কাটাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বাংলানিউজকে জানান, একসময় এ সংস্থাটি বিভিন্ন প্রশংসামূলক কাজ করেছিল। কিন্তু এএসআই বেলালের অনৈতিক কাজের কারণে বর্তমানে সংস্থাটি অচল।
তিনি বলেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাহলে উন্নত হবে।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌরদৌস আলী বাংলানিউজকে জানান, এটি পুলিশের বিভাগীয় সিদ্ধান্ত। বিভাগ সিদ্ধান্ত নিলে এটিকে ঢেলে সাজানো হবে।
তবে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সংস্থাটি সাজানোর দায়িত্ব জেলা পুলিশের। তারা কেন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে না তা তারাই ভালো জানে।
এ বিষয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জানান, সংসদের চলতি অধিবেশনে বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হবে। তাকে অনুরোধ করা হবে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
টিটি/আইএসএ/টিসি