ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুদকের গণশুনানি

সেবাবঞ্চিতদের ক্ষোভ, সমাধানের আশ্বাস রাজউকের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
সেবাবঞ্চিতদের ক্ষোভ, সমাধানের আশ্বাস রাজউকের ছবি :দীপু / বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

ঢাকা: জায়গার সমস্যা নিয়ে কেউ কেউ বছরের পর বছর রাজউকে ঘুরেছেন। সমাধান মেলেনি।

ফাইল কোথায় কেউ জানেন না। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ কথাই বলেন না। অবশ্য চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিলে অবস্থা ভিন্ন। কর্মকর্তারাও কথা বলেন। ফাইলও চলে দ্রুত। রাজউকের সেবা নিয়ে গণশুনানিতে এসে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সেবাবঞ্চিত সাধারণ জনগণ।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দিনব্যাপী দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। রাজউকে ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন মন্ত্রীও। বলেছেন, রাজউকে জনবলের অভাব। যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
 
তিনি বলেন, রাজউক কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে প্ল্যান করে। কিন্তু দেখা যায়, প্রতিটি বিল্ডিংয়ে তা ঠিকঠাক প্রয়োগ হচ্ছে না। প্রতিটি বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রেই তো রাজউক ফিতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। এক্ষেত্রে নাগরিকদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।
 
‘তবে আমি মনে করি, জনবল কম হলেও আমাদের (রাজউক) অথরাইজড অফিসার আছেন। তাদের সেগুলো দেখা দরকার ছিল’- বলেন মন্ত্রী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর গণশুনানির কার্য্যক্রম শুরু হয়। এতে মূলমঞ্চের বামদিকে বসেন ভুক্তভোগী জনগণ। ডানপাশে ছিলেন রাজউকের কর্মকর্তারা। মাঝে বসে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আখতার হোসেন ভুঁইয়া।

গণশুনানি চলাকালে দর্শকসারিতে ছিলেন দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান ও রাজউকের  চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, কমিশনার (অনুসন্ধান) নাসিরউদ্দীন আহমেদ, সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল, মহাপরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, মহাপরিচালক ড. মো. শামসুল আরেফিন, ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মো. নাসিম আনোয়ারসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
 
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া বাড্ডা অঞ্চলের বাসিন্দা মো. শহিদুল্লাহ ক্ষতিগ্রস্থ মালিক হিসেবে প্রাপ্ত প্লট বুঝিয়ে না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৮৭ সালে ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে আমাদের রাজউক থেকে বাড্ডা এলাকায় প্লট পাওয়ার কথা ছিল। তৎকালীন সময়ে সরকার আমাদের জমি অধিগ্রহণ করে নিয়ে রাউজক থেকে আড়াই কাঠা প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু ২৮ বছর পার হলেও রাজউক প্লট বুঝিয়ে দেয়নি। আমার শ্বশুর ওই প্লটের জন্য রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মারা গেছেন। এখন ওয়ারিশরাও কি বঞ্চিত হবেন ?’
 
এ সময় রাউজকের পক্ষে উপ-পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাড্ডা এলাকায় ঢাকা ডিসি অফিসের সঙ্গে রাজউকের জমি নিয়ে কিছু ঝামেলা থাকার কারণে রাজউক এখনও ওই এলাকার জমি বুঝে পায়নি। অপেক্ষা করুন। শিগগিরই প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হবে’।

এর উত্তরে মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘২৮ বছর পার হয়ে গেছে, আর কতো বছর অপেক্ষা করতে হবে?’

এ সময়ে গণশুনানির সঞ্চালক রাজউক কর্তৃপক্ষের জানতে চান। রাজউকের পক্ষ থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।
 
সম্প্রসারিত উত্তরা আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দ নিয়ে ভুক্তভোগী সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আবদুর রশিদ খান অভিযোগ করে বলেন, ‘উত্তরায় রাজউকের তৃতীয় প্রকল্পে ১৭ এইচ প্লট বরাদ্দ পাই। কিন্তু প্রায় ২০ বছর ঘুরেও প্লট বুঝে পাইনি’।
 
তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে পেনশনের যে টাকা পেয়েছি তা প্লটের পেছনে শেষ করেছি। রাজউকের প্রতিটি ফ্লোরে ঘুরেও কোনো সমাধান পাইনি। রাজউকের প্রতি টেবিলে টেবিলে টাকা ঢালতে হয়। রাজউকে একটি নথি দেখতে ৬০ হাজার টাকা লাগে’।
 
আবদুর রশিদের এমন বক্তব্যে সঞ্চালক রাজউকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তার প্লটের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে মাস দু’য়েকের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।
 
২০০০ সালে রাজউকের উত্তরা প্রকল্পের ৪১ নম্বর প্লট পান প্রবাসী ডা. রেজাউল আহসান। জমির খাজনা ও দখল থাকা সত্বেও তিনি দেশে এসে দেখেন, তার প্লটে ৪৩ নম্বর প্লটের মালিক ছয়তলা ভবন করে ফেলেছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাজউকের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এখন কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো?’
 
এ বিষয়ে উপস্থিত ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা রাজউকের উপ-পরিচালক বাবুল মিয়া উত্তরে বলেন, ‘আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। ওই এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণের সময় বেশি জমি নেওয়ায় সকলের প্লট সরে যায়। ফলে একটি প্লট নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্যই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া ওই প্লটের ওপর ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তাই এখন তাকে অন্য জায়াগায় প্লট দেওয়া ছাড়া উপায় নাই। রাজউক আগামী ছয়মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান দেবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
 
নিজের জমিতে প্ল্যান পাস করে অন্য একজন ভবন নির্মাণ করে দখল করেছেন এমন অভিযোগ তুলেছেন মিরপুর এলাকার বাসিন্দা গাজী আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে বিদেশে আছি। দুই এক বছর পর পর দেশে আসি। মিরপুরে আমাদের নিজের জমিতে টিনের ঘর তুলে ভাড়া দেই। ২০১২ সালে দেশে এসে দেখি, আমার জমিতে ওই এলাকার প্রভাবশালী বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলমসহ বেশ কয়েকজনে মিলে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে ফেলেছেন। রাজউক কিভাবে নকশা অনুমোদন দিল? এ কোন দেশে বাস করছি?’

রাজউকের অথোরাইজড অফিসার আশরাফুল ইসলাম ওই অভিযোগের উত্তরে বলেন, ‘বিষয়টি রাজউককে অবহিত করার পর আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। সমস্যা সমাধানে ধৈর্য ধরতে হবে’।

এ সময় ভুক্তভোগী আবু তাহের বলেন, ‘দেখা করতে গেলে ফাইল ছুড়ে ফেলা হয়। এখন সবার সামনে বলছেন, সমাধান করবেন’।
 
উত্তরা থেকে আসা হুমায়ুন কবির বললেন, ‘শুধু আশ্বাস দিলে হবে না। দুদককে গণশুনানির পর ফলোআপ রাখতে হবে। তা না হলে এগুলো কেবল সমাধানের আশ্বাসে থাকবে, বাস্তবায়ন হবে না’।

গণশুনানিতে রাজউক অফিসে প্লটের অর্থ জমা দেওয়া সত্ত্বেও প্লটের দখল পেতে হয়রানি, ভূমির ছাড়পত্র বা নকশা অনুমোদনে হয়রানির শিকার হওয়া, ক্রয়সূত্রে বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা হস্তান্তর বা নামজারির ক্ষেত্রে হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা। রাজউকের পক্ষ থেকেও অনেককে তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এডিএ/এএসআর

** ‘দুর্নীতির কারণে দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিম বিলুপ্ত করা হয়েছে’
** ‘পরিত্যক্ত জায়গায় সরকারি চাকরিজীবীদের ফ্ল্যাট দেবে রাজউক’
** রাজউকের সেবা বঞ্চিতদের নিয়ে দুদকের গণশুনানি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।