ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিহত ডা. মিঠুর মেয়ে ফাইজা

‘আমার আব্বু-আম্মুকে এনে দাও’

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
‘আমার আব্বু-আম্মুকে এনে দাও’ ছবি: আরিফ জাহান/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: ফাইজা। বয়স আট বছর।

দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। সবার ছোট ভাই পূর্ণ। সে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাবা ডা. ফজলুল বারী মিঠু, মা আসমা-উল-হুসনা, বোন স্নেহা ও গৃহকর্মী সীমা মারা গেছেন। তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে একটি ঘাতক বাস।
 
তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে শিশু ফাইজা ও পূর্ণ। দুর্ঘটনায় ফাইজা মাথায় বেশ চোট পেয়েছে। ঠোঁটেও আঘাত লেগেছে তার। পুরো শরীর ব্যথায় জর্জরিত। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে বিছানায় বসেছিল সে। স্বজনরা তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু অবুঝ ফাইজার চোখে কোনো ঘুম নেই। তার চোখ দু’টো শুধুই মা-বাবা, বোন-ভাই ও গৃহকর্মীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
 
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় বগুড়া শহরের নারুলীর বাসায় গেলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলুল বারী মিঠু বগুড়া সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের খামারকান্দি গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে। স্ত্রী আসমা-উল-হুসনা (৩৪), শিশু কন্যা স্নেহা (১১), ফাইজা (৮), ছেলে পূর্ণ (৪) ও গৃহকর্মী সীমাকে (২১) সঙ্গে নিয়ে নিজ কারযোগে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দিনগত রাতে কুমিল্লার এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত শেষে ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি।
 
পথিমধ্যে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার টামটা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারটির তিনজনসহ গৃহকর্মী নিহত হন। আর মেয়ে ফাইজা ও ছেলে পূর্ণ গুরুতর আহত হয়। দু’জনের মধ্যে পূর্ণ ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গ্রামের বাড়িতে বুধবার দাফন করা হয়েছে ওই পরিবারের নিহত তিনজনকে।

ফাইজা আহত অবস্থায় বগুড়া শহরের নারুলীর বাসায় রয়েছে। তার বাবা কর্মস্থল ঢাকায় থাকলেও আর মা-বোন-ভাইয়ের সঙ্গে এ বাসায় থাকতো ফাইজা।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারুলীর বাসায়ও প্রচুর মানুষের ভিড়। বাসার দোতলায় নিহতের স্বজনেরা কেউ চেয়ারে বসে, কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু অবুঝ ফাইজাকে নিয়ে তারা তখনও মহাবিপাকে। কারণ সে বারবার মা-বাবার কাছে যেতে চাচ্ছিল। আব্বু-আম্মুকে এনে দেওয়ার কথা বলছিল।
 
আবার কখনও বোন, ভাই ও কাজের গৃহকর্মীর কথা জানতে চাচ্ছিল। কিন্তু সবাই নির্বাক। যে যেভাবে পারছিলেন ফাইজাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এরপরও ফাইজাকে থামানো যাচ্ছিল না। সে বারবার বলেই যাচ্ছিল ‘আব্বু-আম্মু কোথায়। তাদের নিয়ে এসে দাও। আমি তাদের দেখবো। তাদের কাছে যাবো। আপুমনি কোথায়? আমার ভাইয়া কোথায়? কাজের আপু কোথায়?’
 
তবে অবুঝ ফাইজার এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব জানা থাকলেও দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই স্বজনেরা নানা কায়দা করে তার এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। আর বলছিলেন, ‘সবাই আছে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। তুমি এখন অসুস্থ। তুমি সুস্থ হয়ে উঠলে সবাই এসে পড়বে’।
 
একপর্যায়ে তার খালা তাকে ঘুমানোর জন্য ঘরে নিয়ে যান। বাবার বিছানায় শুয়ে দেওয়া হয় ফাইজাকে। কিন্তু তার চোখে কোনো ঘুম নেই। সে শোয়া থেকে উঠে বিছানায় বসে পড়ে। সঙ্গে দেখতে আসা লোকের ভিড়ের মাঝে তখনও তার দু’চোখ মা-বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।