ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ডা. মিঠুর মৃত্যু

বন্ধ হয়ে গেলো অসহায় মানুষের ফ্রি চিকিৎসাসেবা!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
বন্ধ হয়ে গেলো অসহায় মানুষের ফ্রি চিকিৎসাসেবা! ছবি: আরিফ জাহান / বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

বগুড়া: ডা. মো. ফজলুল বারী মিঠু। ছিলেন ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক।

পেশাগত কারণে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি। কিন্তু গ্রামের হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষদের কখনও ভুলতে পারেননি। সবসময় তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া নিয়ে ভাবতেন।
 
তাই বগুড়া শহরের নারুলীর বাসায় নিচতলায় গড়ে তোলেন ফজিলা মেমোরিয়াল হেলথ হোম। ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন তার মা। মায়ের নামেই রাখেন চিকিৎসাকেন্দ্রের নাম। গ্রামের মানুষদের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রত্যেক সপ্তাহে এখানে ছুটে আসতেন। প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ও শনিবার একই সময় শুরু করে বিকেল পর্যন্ত তিনি রোগীদের সময় দিতেন। গ্রামের সিংহভাগ রোগী তার কাছ থেকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা পেতেন।
 
কিন্তু এক ঘাতক বাস তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সঙ্গে স্ত্রী, শিশু কন্যা ও গৃহপরিচারিকাও নিহত হয়েছেন। আর এতে মিঠুর দেওয়া ফ্রি চিকিৎসাসেবা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো। প্রিয় মানুষটি হারিয়ে হতবাক বনে গেলেন রাজাপুর ইউনিয়নের খামারকান্দিসহ আশেপাশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষগুলো।
 
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের খামারকান্দি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য ওঠে আসে।
 
আবু সাঈদ ও নাদিরসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, ডা. মিঠু ছিলেন একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। তার কাছে ধনী-গরীবের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। গ্রামের কোনো মানুষের সঙ্গে তিনি কখনও দুর্ব্যবহার করতেন না। ছোটদের খুব ভালোবাসতেন। বড়দের সম্মান করে চলতেন।
 
শরিফুল ইসলাম ও ফোজাহার হোসেন সোয়েব বাংলানিউজকে জানান, গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের চিকিৎসক ছিলেন ডা. মিঠু। টাকার জন্য কেউ তার চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতেন না। কারণ তিনি অসহায় মানুষদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিতেন। অনেক সময় ওষুধ কেনার জন্য রোগীকে নিজ থেকে টাকা পর্যন্ত দিতেন।
 
দুলু মাস্টার ও মুক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান সময় ডা. মিঠুর মতো মানুষ মেলা বড় দায়। তিনি গ্রামের দুঃখী মানুষদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। সবাইকে পরিবারের মতোই ভাবতেন। ডা. মিঠু ছিলেন এ গ্রামের মানিক। যাকে হারিয়ে পুরো গ্রামে আজ ভীষণভাবে শোকহত।  
 
ভাগ্নে এবিএম তারিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মামা-খালার ৪ বোন ও ১ ভাই। এর মধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন, ফয়জুন্নাহার ও ফকরুন্নাহার প্রত্যেকেই বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) নির্বাহী পরিচালক পদে চাকরি করেন। সবার ছোট বোন নাহিদা ইয়াসমিন গৃহিণী। ব্যক্তি জীবনে সবাই বিবাহিত।  
 
তিনি আরো জানান, ডা. ফজলুল বারী মিঠুর মা ফজিলাতুন্নেছা ২০০৬ সালে মারা যান। বাবা শামসুদ্দিন প্রায় বছর দু’য়েক হলো বয়স্কজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন থেকেই তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন।
 
মামী আসমা-উল-হুসনার বাড়ি জয়পুরহাট জেলায়। সম্প্রতি মামী কুমিল্লার তার খালাতো বোনের বিয়ের দাওয়াতে ২ মেয়ে, ১ ছেলে ও গৃহপরিচারিকাকে নিয়ে যান।
 
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে মামা ঢাকা থেকে পরিবারকে আনতে নিজেই গাড়ি চালিয়ে কুমিল্লায় যান। একইদিন সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার টামটা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারা মারা যান।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমবিএইচ/জেডএস

** ‘আমার আব্বু-আম্মুকে এনে দাও’
** শোকে বাকরুদ্ধ নিহত ডা. মিঠুর পরিবার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।