ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জনকল্যাণে গবেষণা ও অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
জনকল্যাণে গবেষণা ও অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেশের স্বার্থে গবেষণা ও গবেষণাকাজে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্ট গবেষক-শিক্ষকবিদরা। পাশাপাশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।



শনিবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শিল্প গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা: বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্পপ্রতিষ্ঠান যৌথ গবেষণা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষক-গবেষক, অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনধিরা এ আহ্বান জানান।
 
আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবকল্যাণের জন্য গবেষণা নিয়ে আসতে হবে। ব্যয় করতে হবে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সিএসআরগুলো (করপোরেট স্যোশাল রেসপন্সিবিলিটি) শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গবেষণায় আসতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর টাকা আছে, সিএসআরকে এদিকে যাওয়া উচিত।
 
সরকার ও শিল্পগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে জানিয়ে সাবেক এ গভর্নর বলেন, এজন্য সরকারকেই প্রথম এগিয়ে আসতে হবে, অর্থ দিতে হবে।
 
তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব প্রতিভাকে মূল্যায়ন করি না, বাইরে থেকে নিয়ে আসি, এটা কাম্য নয়। নিজস্ব প্রতিভাবগুলোকে উৎসাহ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো গবেষণা করে। বুয়েট-রুয়েটকে বলবো, কারিগরি নিয়ে একটু গবেষণা করুন। বেসিক গবেষণা করুক, তারা টাকা চাইলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দিতে পারে।
 
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বাইরে থেকে কিনে আনা টেকনোলজি দিয়ে এগোতে পারবো না, নিজস্ব ভাবধারায় টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। গবেষণা মানুষকে চিন্তাশীল করে, গোঁড়ামি, ব্যাকওয়ার্ড থেকে, নানা রকম ধুম্রজালে না রেখে মুক্ত করে, মানুষ সচেতন হবে, এভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
 
দেশ এগিয়ে নেওয়ার জন্য গবেষণার অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, ছোট ও বড়; এই দুই শ্রেণীর শিল্পগুলোর মধ্যে ছোটগুলো অর্থের জন্য দাঁড়াতে পারছে না। তাদের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গবেষণার কাজে এগিয়ে নিতে হবে। তবে সেই গবেষণা যেন জনকল্যাণের জন্য হয়, এতে দেশ এগিয়ে যাবে।
 
গবেষণায় বরাদ্দ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবা আই সেরাজ। তিনি বলেন, সরকার যে বরাদ্দ দিচ্ছে তা দিয়ে গবেষণা সম্ভব নয়।
 
তিনি বলেন, গবেষকরা সবাই বাইরে যেতে চায় না, দেশে থাকতে চাচ্ছে, কিন্তু তার মূল্যায়নটা সরকারকে দিতে হবে। গবেষক ও শিল্পপতিদের সমন্বয়ের জন্য দক্ষ জনবল দিয়ে একটি ‘কমিউনিকেশন বডি’ তৈরি করার উপর জোর দেন এই গবেষক।
 
তিনি বলেন, এখন জিনোমের যুগ, শুধু ওষুধ খাওয়াচ্ছে, কিন্তু জানে না যে জিনোমের কারণে রোগটা হচ্ছে। এটার জন্য গবেষণা প্রয়োজন।
 
গবেষণা করলেও মূল্যায়ন হয় না বলে জানান একই বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। তিনি বলেন, আমাদের দেশে গবেষণার মূল্যায়ন নেই, কঠিন কাজের জন্য সহায়ক পরিবেশও নেই। গবেষণা কাজ করলেও ক্লাসরুম ও প্রাকটিক্যাল ক্লাসের চাপ রয়েছে।  
 
তিনি বলেন, গবেষণার পাশাপাশি গবেষণায় ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে আমদানি করায় সেগুলো ঠিক মানসম্মত কিনা- তা বুঝতে পারি না। নিজেদের আমদানি করার সুযোগ নেই। এটিও গবেষণার অন্তরায়।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা গবেষণাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। এটা গবেষকদের হতাশ করে দেয়।
 
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন পরিচালক (গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ) বাবুল চন্দ্র রায় পাটে ৬০-৭০ শতাংশ ভিসকোজ রয়েছে। কোটি কোটি টাকায় ভিসকোজ আমদানি করা হয়। গবেষক ও শিল্পের মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়াতে হবে। পাট অতিখরচে উৎপাদন করা হলেও বিক্রি হচ্ছে কম দামে।
 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য গবেষণা কাজে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংযুক্ত করে এগোতে হবে। গবেষণা উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, এতে উৎপাদন খরচ কম হবে।
 
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান।
 
প্রবন্ধের উপর আরও আলোচনা করেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা, আয়োজক সংগঠন চিন্তার চাষ’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যান এম জাকির হোসেন খান।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এমআইএইচ/ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।