ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উন্নয়ন উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
উন্নয়ন উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ ছবি: শাকিল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রানওয়ে ধরে ছোটার শেষ মুহূর্তে একটা প্লেন যে অবস্থায় গিয়ে শূন্যে উঠতে শুরু করে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ঠিক সে অবস্থানেই রয়েছে। এখন দরকার কিছু বিষয়ে পরিবর্তন ও সঠিক কর্মপন্থা।

তাহলেই উন্নয়নের হাওয়ায় ভাসতে শুরু করবে দেশ।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলানিউজের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জেস অব মেগা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্লিমেন্টেশন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এমনই মত দিলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে মোনাস ইউনিভার্সিটির প্রজেক্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত প্রকৌশলী খন্দকার এ সালেক সুফী।

কর্মশালায় বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও এর বাধাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ও ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় স্থান করে নিতে সরকারের উদ্যোগ ও অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন অংশগ্রহণকারীরা। বিশেষ করে, বহুল আলোচিত পদ্মাসেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ওপর আলোকপাত করা হয় এই আলোচনায়।

মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়াতে হবে বলে কর্মশালায় মত প্রকাশ করেন খন্দকার সালেক সুফী। এক্ষেত্রে আলোচিত প্রকল্পগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হন।

বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপরে উল্লেখ করে খন্দকার এ সালেক সুফী বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে থাকাটা বাঞ্ছনীয়। পদ্মাসেতু নির্মিত হলে টেকনাফ থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ অত্যন্ত সহজ হয়ে যাবে। মুন্সীগঞ্জে স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশের ‘হংকং’ বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া এই সেতু, মেট্রোরেল ও ৠাপিড বাস সার্ভিস চালু হলে নারায়ণগঞ্জ, জয়দেবপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়ও এমন স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলা যাবে। ফলে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো সম্ভব হবে।

মেট্রোরেল প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, এ প্রকল্প রাজধানীর যানজট অনেকাংশেই কমিয়ে আনবে। আধঘণ্টার মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিলে পৌঁছানো যাবে। ফলে মানুষের কর্মঘণ্টা অপচয় অনেকখানি কমে আসবে।

বিশ্বের অনেক দেশেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে মেট্রোরেল সংযোগ রয়েছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই, তারা সরকারের কাছে এর দাবি জানিয়েছে বলে এ সময় জানান সালেক সুফী।

তিনি বলেন, এলিভেটেড মেট্রোরেলের জন্য যে রুট নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাও পড়েছে। এক্ষেত্রে বাফার ওয়ালের মাধ্যমে শব্দ কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ অটুট থাকে। সেই সঙ্গে কম্পনের মাত্রা কমিয়ে আনতেও বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে খন্দকার এ সালেক সুফী বলেন, যদিও এ প্রকল্প সফল হতে আরও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে, তারপরও বলা যায়, আমরা সঠিক পথেই আছি।

রুশ প্রযুক্তির ওপর ভরসা করা যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কাজ তত্ত্বাবধানে শক্তিশালী বাংলাদেশি ইউনিটের প্রয়োজন।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে খন্দকার এ সালেক সুফি বলেন, সুন্দরবন ধ্বংস হবে বলে যে শঙ্কাটা করা হচ্ছে, বাস্তবতা আসলে তার থেকে ভিন্ন। কয়লা থেকে প্রধানত সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। সুন্দরবনের গাছের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড কোনো ক্ষতির কারণ নয়। কারণ উদ্ভিদ নিজেই এ গ্যাস শোষণ করে। বাকি রইলো সালফার ডাই-অক্সাইড। এক্ষেত্রে এমন কয়লার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যার থেকে এ বিষাক্ত গ্যাসের উৎপাদন অপেক্ষাকৃত কম হয়। সেই সঙ্গে ফিল্টারিং ব্যবস্থা ও উ‍ঁচু চিমনি সুন্দরবনকে এ গ্যাস থেকে রক্ষা করতে পারবে। আরও একটা বিষয় হলো, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখান থেকে সুন্দরবনের দিকে বছরে মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন বাতাসের প্রবাহ থাকে।

তবে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎপ্রকল্পের জন্য বড় বড় জাহাজে কয়লা নিতে হবে, যার ফলে শব্দদূষণে পাখি ও পশুদের আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে, বন থেকে চলে যেতে পারে, সে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে, বলেন সালেক সুফী।

সবগুলো প্রকল্প সফল করতে এবং মেগা প্রকল্পগুলোকে বাস্তবরূপ দিয়ে লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি সাংগঠনকি শৃঙ্খলা। সেই সঙ্গে দেশে উৎপাদিত গ্যাস, কয়লাসহ খনিজ সম্পদগুলোর দ্রুত আহরণসহ নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া স্থিতিশীল সবুজ পরিবেশ সৃষ্টি ও রক্ষায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে অগ্রসর হতে হবে বলে কর্মশালায় সবাই একমত হন।

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আয়নুল কবীর, বাংলানিউজের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন, আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল, অশোকেশ রায়, আউটপুট এডিটর (ইংরেজি) এস এম সালাহউদ্দিন, কান্ট্রি এডিটর শিমুল সুলতানা, লাইফস্টাইল এডিটর শারমীনা ইসলাম, এডিশনাল আউটপুট এডিটর রাইসুল ইসলাম, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর আসিফ আজিজ, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট জেসমিন পাপড়ি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সাজেদা সুইটি, মাজেদুল নয়ন ও মফিজুল সাদিক, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর কালাম আজাদ বেগ ও শামীম হোসেন, নিউজরুম এডিটর শমীম রেজা ও রাজিউল হাসান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।