ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও মো. ওবায়দুল হক তাহেরের মামলা রায়ের জন্য কার্যতালিকায় এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর মঙ্গলবারের (০২ ফেব্রুয়ারি) কার্যতালিকায় রয়েছে মামলাটি।
চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় দেবেন। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।
গত ১০ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ হওয়ায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল এবং আসামিপক্ষে ননী-তাহেরের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
প্রসিকিউশন তার যুক্তিতর্কে দাবি করেছেন, অভিযুক্ত আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এজন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আরজি জানানো হয়।
অন্যদিকে আসামিপক্ষ দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেননি প্রসিকিউশন। তাই এসব অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানানো হয়।
ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ প্রসিকিউশনের ২৩ জন সাক্ষী। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে একজন সাফাই সাক্ষীর নাম দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সাক্ষীকে হাজির করতে পারেননি তারা।
গত বছরের ৫ এপ্রিল প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) তাহের-ননীর বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে ২ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরিতকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে রয়েছে ৪২ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা-গণহত্যা, দুই শতাধিক পরিবারের বাড়ি দখল ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে দেশান্তরিতকরণ এবং প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়ি-ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর তাহের-ননীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। তার আগে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে ৬৩ পৃষ্ঠার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করেছেন তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর। ২০১৪ সালের ৬ জুন থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তদন্ত চালিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ৯ নভেম্বর এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় প্রসিকিউশনে।
২০১৪ সালের ১২ আগস্ট তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর পর পরই নেত্রকোনা পৌর শহর থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ। ১৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।
২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এমএইচপি/এএসআর