ঢাকা: মুখরোচক আর লোভনীয় থাই ও চাইনিজ খাবারের সমাহার। রয়েছে লাঞ্চ-ডিনারের ব্যবস্থাও।
চিকেন, চিলি, অনিয়ন, এগ ফ্রাইড রাইস, ফ্রাইড চিকেন, মিক্সড ভেজিটেবল, থাই থিক স্যুপ তো আছেই। ভিন্ন ধরনের এসব মুখরোচক খাবার দিয়ে গ্রাহকদের নজর কেড়েছে রাজধানীর ধানমন্ডির অভিজাত রেস্তোরাঁ রেড টমেটো।
নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশের কারণে ভোজন রসিকদের কাছে রেড টমেটো সুপরিচিতি নাম হলেও নীল চালান দিয়ে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অভিযানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীল চালান ব্যবহার করে রেড টমেটোর বিরুদ্ধে সোয়া কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি অভিযানেও বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায়। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে মীনা বাজারের পাশে রেড টমেটো রেস্তোরাঁ।
প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তা থেকে ঠিকই ভ্যাট নেয়, কিন্তু মূসক (মূসক-১১) চালান না দিয়ে গ্রাহকদের দেয় নীল চালান। পিওএস (পয়েন্ট অব সেলস) মেশিন থাকলেও তা ব্যবহার করা হয় না। দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগ করছিলেন ভোক্তারা। এরপর ১৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়।
তবে এর আগেই বিষয়টি টের হয়ে বিক্রির রেকর্ডপত্র সরিয়ে ফেলেন রেড টমেটোর কর্মীরা।
কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে চলা অভিযানে রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের পেছনে সিঁড়ির নিচে পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড।
অভিযানে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ৮বছর আগের বিক্রয় তথ্যও পাওয়া গেছে। এসব রেকর্ড অনুযায়ী ১ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
‘২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৪২১ টাকা বিক্রি করলেও বিক্রয় দেখানো হয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার ৩২০ টাকা। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি নগদ টাকা ছাড়াও মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, নেক্সাস কার্ডসহ সব ক্রেডিট কার্ডে বিল আদায় করে। এ সময় গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাটও নেওয়া হয়। কিন্তু ভ্যাট চালান দেওয়া হয় না।
কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুযায়ী-সেবার রেকর্ড রাখতে হবে। কিন্তু ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার জন্য সেভাবে সেবার রেকর্ডও রাখে না রেড টমেটো।
মূসক গোয়েন্দার একজন সহকারী পরিচালক বাংলানিউজকে জানান, সেবার ওপর ভোক্তা থেকে ভ্যাট আদায় করে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ‘ফিক্সড ভ্যাট’র নামে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভ্যাট দিয়েই পার পেয়ে যায় রেড টমেটো।
‘অভিযানে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে দু’টি কম্পিউটার, বাণিজ্যিক দলিল ও রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়। এগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। ’
যোগাযোগ করলে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, কাউকে হয়রানি নয়, সচেতনতা তৈরিই আমাদের উদ্দেশ্য।
‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রেড টমেটো রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়। ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় ওই রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ বলেন তিনি।
গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ভ্যাট দেওয়ার আগে নীল চালান নয়, ইসিআর বা পিওএস এর চালান দেখে নিতে হবে। একই সঙ্গে ইসিআর বা পিওএস এ ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এমএ/