ঢাকা: অপহরণকারীদের দেওয়া শর্তেমতে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে শিশু আব্দুল্লাহকে ফেরত পেতে অপেক্ষা করমান শিশু আব্দুল্লাহর পরিবার। অপহরণের তিনদিন হতে চললেও এখনও খোঁজ মেলেনি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১১ বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর।
অপহৃত সন্তানকে ফিরে পেতে অপেক্ষায় অশ্রুসিক্ত চোখে প্রহর গুণছেন আব্দুল্লাহর মা রীনা বেগম। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধর্না দেওয়ার পাশাপাশি পাগলের মতো দিগ্বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন সম্প্রতি প্রবাস থেকে আসা শিশুটির বাবা বাদল হোসেন।
শুধু আব্দুল্লাহর পরিবারের লোকজন নয়, শিশুটিকে অপহরণের প্রতিবাদে মানবন্ধন করেছেন তার শিক্ষক, সহপাঠী ও অভিবাকসহ স্থানীয়রা। অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুগারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশুটিকে নিরাপদে উদ্ধারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জোড়ালো দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গেলে নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় একটি চক্র রয়েছে যারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।
কে বা কারা এ চক্রের সদস্য জানতে চাইলে ইঙ্গিত দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রাম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কিছু অসাধু লোকজন এবং তাদের সহযোগীরা শিশুটিকে অপহরণ করতে পারে। গ্রামের অনেকে জানেন, তারা এই গ্রামের বাইরে পুরো কেরানীগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এই চক্রের লোকজনের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে পুরো গ্রামের অসহায় লোকজন। শিশু আব্দুল্লাহ তাদের মাধ্যমেই অপহরণ হয়ে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন ওই স্থানীয় ব্যক্তি।
শুক্রবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার কোনো এক সময়ে শিশুটিকে অপহরণ করা হয় বলে জানিয়েছে অপহৃত শিশুটির নানা মারফত আলী।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, আমরা অপহরণকারীদের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী মুক্তিপণের টাকা নিয়ে অপেক্ষা করছি। ইতোমধ্যে অপহরণকারীদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ২ লাখ টাকা পাঠিয়েছি। এরপরও কোনো সাড়া মিলছে না। অপহরণকারীদের মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
মারফত আলী আরও বলেন, ঘটনার দিন রাতে আমাদের বাসায় পোশাকধারী পুলিশ হাজির হওয়ার কারণে অপহরণকারীরা তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখেছে। মোবাইল বন্ধ করার আগে তারা এসএমএস দিয়েছে- ‘আপনারা পুলিশে খবর দিয়েছেন, আমরা নিষেধ করার পরেও পুলিশ বাসায় আসছে কেন? বিষয়টি খুব খারাপ হয়েছে!’
এর আগে শিশু আব্দুল্লাহ নিকটস্থ মাঠে ক্রিকেট খেলার কথা বলে শুক্রবার দুপুর ২টায় বাসা থেকে বের হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় তার মা, এক চাচা এবং বাসার নিকটস্থ এক ফার্মেসির দোকানির কাছে (০১৮৭-৯৩৬১৭৯৫) নম্বর থেকে এসএমএস আসে। ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে বিকাশ করে সাড়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হলে আব্দুল্লাহকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয় মোবাইল বার্তায়। অন্যথায় শিশুটিকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অপহৃত শিশু আব্দুল্লাহকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা জানত চাইলে ওসি বলেন, সন্দেহভাজন কেউ আটক নেই। এই বিষয়ে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৫
এনএইচএফ/এমজেএফ
** কেরানীগঞ্জের শিশু অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি