বগুড়া: ক্ষেতে ছিপ ছিপ পানি। বইছে শীতের হিমেল হাওয়া।
কেউ বসে আবার কেউবা দাঁড়িয়ে সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন দু’হাত। তুলে চলেছেন বীজতলার বীজ। গোড়া থেকে মাটি ছাড়াতে সেই বীজের মাঝ বরাবর ধরে এক হাত দিয়ে আরেক হাতে আঘাত করছেন।
পানি মিশ্রিত সেই কাঁদা মাটি চমৎকার ঢেউ তুলে ক্ষেতের বুকে আছড়ে পড়ছে। এরপর আটি বেঁধে বীজগুলো ক্ষেতে রাখা হচ্ছে। একই পন্থা অবলম্বন করে শুকনো বীজতলা থেকে বীজ ওঠানো হচ্ছে। পরে বাঁশের তৈরি বাঙের (স্থানীয় ভাষায়) দুই মাথায় দড়ি ঝুলিয়ে ডালিতে ভরে সেই চিরসবুজ বীজগুলো চাষের জমিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আবার বিপরীত চিত্রও রয়েছে। অনেক বীজতলা শীতের কারণে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। এতে করে বীজগুলো চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর এমন ক্ষেতে কৃষকদের তেমন একটা দেখা মিলছে না। কারণ, এসব বীজ থেকে ধান আশা করা যায় না।
তবে বিস্তীর্ণ বোরো বীজতলা সেজেছে ভিন্ন সাজে। সেখানে চলছে সবুজ-হলুদের খেলা!
সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার খ্যাত বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চলের একাধিক গ্রাম সরেজমিন ঘুরে চলতি মৌসুমের বোরো বীজতলার এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বৃহত্তর বগুড়া জেলায় ১১ হাজার ২০০ হেক্টর, জয়পুরহাটে ৪ হাজার ৭৯০ হেক্টর, পাবনায় ৩ হাজার ৮৬০ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে ৮ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা রোপন করা হয়েছে।
আর চলতি মৌসুমে এ চার জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৯৮ হেক্টর জমি। এর মধ্যে বগুড়ায় ১ লাখ ৯০ হাজার ১৩৯ হেক্টর, জয়পুরহাটে ৭২ হাজার ৩১৩ হেক্টর, পাবনায় ৫৮ হাজার ১৫৪ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৪০ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হবে।
বোরো বীজতলায় ব্রি ধান -২৮, ২৯, ৬৪, বি আর -১, ২৬, মিনিকেট, জিরাশাইল ছাড়াও প্রায় ২০-৩০ ধরনের হাইব্রিড জাতের বীজ রোপন করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত এসব জাতের বীজের ধান চাষ চলবে বলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়।
আবু সাঈদ, শহিদুর রহমান, গোলাম রব্বানীসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, শীতের তীব্রতায় বোরো বীজতলা নিয়ে প্রথমে তারা ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু শীতের তীব্রতা এবার বেশি সময় থাকেনি। এ কারণে বোরো বীজতলার খুব একটা ক্ষতি হয়নি। এরপরও শীতজনিত সমস্যায় কিছু কিছু কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। যা দিয়ে ধান চাষ করা সম্ভব নয়। তবে বিগত সময়ের মতো চলতি মৌসুমে বোরো বীজের সংকট হবে না বলেও তারা জানান।
কৃষক রেজাউল করিম বাবলু ও ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বোরোর বীজতলা নিয়ে তাদের মতো অন্য কৃষকরাও এখন চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ, সিংহভাগ কৃষক তাদের চাষের জমি প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। এখন সেই জমিতে বীজ লাগাতে হবে।
এজন্য বীজতলা থেকে বীজ ওঠানো নিয়ে কৃষকরা ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে সার্বক্ষণিক বোরো বীজতলায় অবস্থান করছেন বলেও জানান তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্তি পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হযরত আলী বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরের আবহাওয়া এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ব্যাপক সহায়ক। ফলে শীতজনিত সমস্যার কারণে কোনো ফসলেরই তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। অনুরূপভাবে বোরো বীজতলারও কোনো ক্ষতি হয়নি বলেও তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, এ বছর প্রচুর পরিমাণে বোরো বীজ উদ্ধৃত থাকবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চলতি মৌসুমের বোরো আবাদ চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে যাবে।
এমনকি এবার বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে আশা প্রকাশ করেন এই কৃষিবিদ।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
এমবিএইচ/এএসআর