ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তাহের-ননীর যুদ্ধাপরাধের রায় সকালে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬
তাহের-ননীর যুদ্ধাপরাধের রায় সকালে

ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেত্রকোনার রাজাকার কমান্ডার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও রাজাকার আতাউর রহমান ননীর মামলার রায় দেওয়া হবে মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি)।

সকালে এ রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।



চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় দেবেন। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।

গত ১০ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ হওয়ায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ০৬ জানুয়ারি থেকে মোট চার কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী  এবং আসামিপক্ষে তাহের-ননীর আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
 
প্রসিকিউশন তার যুক্তিতর্কে দাবি করেছেন, অভিযুক্ত ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এজন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আরজি জানানো হয়।
 
অন্যদিকে আসামিপক্ষ দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেননি প্রসিকিউশন। তাই এসব অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানানো হয়।
 
তাহের-ননীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ প্রসিকিউশনের  ২৩ জন সাক্ষী। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে একজন সাফাই সাক্ষীর নাম দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সাক্ষীকে হাজির করতে পারেননি তারা।
 
গত বছরের ০৫ এপ্রিল প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) তাহের-ননীর বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
 
এর আগে ০২ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরিতকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে রয়েছে ৪২ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা-গণহত্যা, দুই শতাধিক পরিবারের বাড়ি দখল ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে দেশান্তরিতকরণ এবং প্রায় সাড়ে চারশ’ বাড়ি-ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
 
গত বছরের ১৮ জানুয়ারি তাহের-ননীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহসান বাদল। অন্যদিকে ২৬ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে আসামিপক্ষে শুনানি করেন ননীর আইনজীবী শাহ মোহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন ও তাহেরের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।

২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর তাহের-ননীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ০৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। তার আগে ০৫ নভেম্বর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে ৬৩ পৃষ্ঠার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
 
মামলাটি তদন্ত করেছেন তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর। ২০১৪ সালের ০৬ জুন থেকে ০৪ নভেম্বর পর্যন্ত এক বছর চার মাস ২৮ দিন  তদন্ত চালিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ০৯ নভেম্বর এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় প্রসিকিউশনে।
 
২০১৪ সালের ১২ আগস্ট তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর পর পরই নেত্রকোনা পৌর শহর থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ। ১৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।

২৫ আগস্ট প্রসিকিউশনের আবেদনক্রমে তাহের-ননীকে একদিন করে সেফহোমে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

তাহের-ননীর বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওবায়েদুল হক তাহের (৫৫)  নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার ভোগাপাড়ার শুনই এলাকার মৃত মঞ্জুরুল হকের ছেলে। তিনি নেত্রকোনা পৌর শহরের তেরীবাজারে থেকে ব্যবসা করেন। অন্যদিকে আতাউর রহমান ননী (৫৮) একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা এলাকার মৃত আহছান আলী ওরফে আছান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছেলে। ননী পৌর শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং একজন সাবেক ফুটবলার।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা ‘পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা’র বিশ্বাস থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন।

তাহের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হলে অপর আসামি ননীসহ আরো অনেকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর শহরের মোক্তারপাড়ায় মলয় বিহারী বিশ্বাসের বাড়ি দখল রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন তারা।

তারা ১৯৭১ সালে নেত্রকোনা জেলার সদর এলাকা ও বারোহাট্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট তাহের ও ননীর নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নিযাতনের পর ত্রিমোহনি ব্রিজে হত্যা করে। একই সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টা রোডের শ্রী শ্রী জিউর অাঁখড়ার সামনে থেকে তাহের ও ননী কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করেন। পরে নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজে গুলি করে হত্যা করা হয় দবিরকে।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর তাহের ও ননীর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রাম থেকে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে নিয়ে ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ননী ও তাহের মলয় বিশ্বাস ও অ্যাডভোকেট শীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল করে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারসহ তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করেন।  

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৫ নভেম্বর তাহের ও ননী বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে লক্ষীগঞ্জ খেয়াঘাট ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, তাহের ও ননী চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামিনী চন্দ্র চক্রবর্ত্তীসহ ২৭ জনকে নেত্রকোনা জেলগেট থেকে আটক ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
এমএইচপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।