ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তাহের-ননীর বিরুদ্ধে নয়জনকে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬
তাহের-ননীর বিরুদ্ধে নয়জনকে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত

ঢাকা: নেত্রকোনার রাজাকার কমান্ডার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও তার সহযোগী রাজাকার আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে আনা ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রথম তিনটিই প্রমাণিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেওয়া তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ে ফজলুল রহমান তালুকদারসহ ৯ জনকে অপহরণ করে নির্যাতন শেষে হত্যার দায় প্রমাণিত হয়েছে এসব অভিযোগে।

একইসঙ্গে প্রমাণিত হয়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগও।

তবে দুই পরিবারকে দেশান্তরিতকরণের চতুর্থ অভিযোগটি প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রমাণিত প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট তাহের ও ননীর নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে বাউসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মফিজ উদ্দিন তালুকদারের ছেলে ফজলুর রহমানকে  ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনি ব্রিজে হত্যা করে। একই সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টা রোডের শ্রী শ্রী জিউর অাঁখড়ার সামনে থেকে তাহের ও ননী কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করেন। পরে নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজে গুলি করে হত্যা করা হয় দবিরকে।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর তাহের ও ননীর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রাম থেকে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে নিয়ে ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

২৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের দ্বিতীয় অংশে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত ও একটি প্রমাণিত না হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রমাণিত না হওয়া চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ননী ও তাহের মলয় বিশ্বাস ও অ্যাডভোকেট শীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল করে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারসহ তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করেন।  

মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটা ৩৬ মিনিট থেকে রায় দেওয়া শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বেলা এগারটা থেকে রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়ছেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। এর আগে রায়ের প্রথম অংশ পড়েছেন অন্য সদস্য বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।

সবশেষে রায়ের মূল অংশ ও সাজা ঘোষণা করবেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হক।

সকাল দশটার পরে তাহের ও ননীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এনে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় এনে রাখা হয়। সাড়ে দশটার দিকে হাজতখানা থেকে তাদেরকে তোলা হয় ট্রাইব্যুনালের আসামির কাঠগড়ায়। এর পাঁচ মিনিট পরে এজলাসে বসে রায় দেওয়া শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।

একই মামলার আসামি তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরিতকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪২ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা-গণহত্যা, দুই শতাধিক পরিবারের বাড়ি দখল ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে দেশান্তরিতকরণ এবং প্রায় সাড়ে চারশ’ বাড়ি-ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।

ওবায়েদুল হক তাহের (৫৫)  নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার ভোগাপাড়ার শুনই এলাকার মৃত মঞ্জুরুল হকের ছেলে। তিনি নেত্রকোনা পৌর শহরের তেরীবাজারে থেকে ব্যবসা করেন। অন্যদিকে আতাউর রহমান ননী (৫৮) একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা এলাকার মৃত আহছান আলী ওরফে আছান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছেলে। ননী পৌর শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং একজন সাবেক ফুটবলার।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা ‘পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা’র বিশ্বাস থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন।

তাহের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হলে অপর আসামি ননীসহ আরো অনেকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর শহরের মোক্তারপাড়ায় মলয় বিহারী বিশ্বাসের বাড়ি দখল রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন তারা।

তারা ১৯৭১ সালে নেত্রকোনা জেলার সদর এলাকা ও বারোহাট্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন।

গত ১০ জানুয়ারি বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ০৬ জানুয়ারি থেকে মোট চার কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী  এবং আসামিপক্ষে তাহের-ননীর আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
 
তাহের-ননীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ প্রসিকিউশনের  ২৩ জন সাক্ষী। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিলেন না।
 
গত বছরের ০৫ এপ্রিল প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) তাহের-ননীর বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
 
এর আগে ০২ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পরই ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট নেত্রকোনা পৌর শহর থেকে তাহের ও ননীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
ইএস/এএসআর

** তাহের-ননীর বিরুদ্ধে ফজলু হত্যা-লুটপাটের অভিযোগ প্রমাণিত
** তাহের-ননীর রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়া চলছে
** তাহের-ননীর যুদ্ধাপরাধের রায় ঘোষণা চলছে
** আসামির কাঠগড়ায় তাহের-ননী
** তাহের-ননী ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়
** তাহের-ননীর যুদ্ধাপরাধের রায় সকালে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।