ঢাকা: পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়তে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হওয়ায় এ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন জটিল হয়ে পড়বে বলে দলের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন।
চলতি বছর মার্চের শেষের দিকে প্রথম দফায় ৬শ’র মতো ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন চলতি মাসের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করতে পারে।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রস্তুতির তোড়জোড় চলছে। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার আইন হওয়ায় পৌরসভার পর এবার ইউপি নির্বাচনও প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
দলীয় মনোনয়ন এবং দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ আসায় দলের নেতাদের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে। অনেকেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এবং প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্য বছরের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে দলের প্রার্থী সংখ্যা অনেক বেশি। কোনো কোনো ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ৮/১০ করে সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে প্রায় ৫ জন করে প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এসব প্রার্থীদের মধ্যথেকে একজনকে দলের মনোনয়ন দিলে ক’জন দলের সিদ্ধান্ত মানবেন বা ক’জনকে বসিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন দলের নীতিনির্ধারণকারী নেতারা।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়টি চিন্তার মধ্যে রেখেই গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। ওই নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ছিলেন তাদেরকে ইতোমধ্যেই দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুধু বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াই নয় যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আর যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন, সহযোগিতা ও মদদ দিয়েছেন তাদের ব্যাপারেও তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান নেতারা।
নেতারা বলেন, অভিযুক্তদের তালিকায় আওয়ামী লীগের ২২/২৩ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরবর্তীতে এমপি মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন। এ জন্যই বিষয়টিকে ভালভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে পৌরসভা নির্বাচন শুরু থেকেই বিদ্রোহীদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদেরকে নানাভাবে বুঝিয়ে ও চাপ দিয়ে বসানোর চেষ্টা করা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হলেও ৫০টির মতো পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। তাদেরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত সময় দেওয়ার পর দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।
পৌরসভা নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নেওয়া হলেও পুরোপুরি সফলতা আসেনি। ইউপি নির্বাচনেও এ কঠোর অবস্থান থাকলে কতটুকু সফলতা আসবে তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রার্থী যতোই থাক মনোনয়ন পাবেন একজন। যারা দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন তাদের ক্ষমা নেই। নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। যারা এটা করবে তাদের পৌরসভার বিদ্রোহীদের মতো পরিণতি হবে।
পৌরসভায় শুধু বিদ্রোহী প্রার্থী নয়, বিদ্রোহী যারা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরও সাময়িক বহিষ্কা করা হয়েছে, চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। ইউপিতেও যারা এ ধরণের কাজ করবে তাদেরকেও দল থেকে বহিষ্কার হতে হবে বলে জানান আহমদ হোসেন।
আওয়ামী লীগের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন সত্য। তারা নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে কিন্তু মনোনয়ন পাবেন একজন যোগ্য প্রার্থী। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পৌরসভা নির্বাচনে আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে অনেকাংশে আমরা সফলও হয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
এসকে/বিএস