ঢাকা: একটি মাত্র কবিতা ও একটি নারী কন্ঠ। আর সেই নারী কন্ঠই জাগিয়ে দিলো পুরো কবিতার উৎসবে থাকা কবিদের।
মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের বিপরীতে জাতীয় কবিতা উৎসব-২০১৬ এর সপ্তম পর্বের মঞ্চে কবি কামরুন্নাহার মুন্নি যখন স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করছিলেন তখন বারংবার এমনটি হচ্ছিল।
অবশ্য তার প্রমাণ মিললো তার কবিতা আবৃত্তি শেষে। কবির কবিতার ভাষা ও আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয়েই তাকে পাঁচশ টাকা উপহারও দিলেন একজন নারী কবি।
তার এ কবিতাটি উৎসবের শ্রেষ্ঠ কবিতা বলে বিবেচিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করলেন উপস্থিত কবিরা। কেউ কেউ তাকে বুকে টেনে আর্শিবাদও করলেন, তাদের একজন কবি কাজী রুজি তাকে মঞ্চের সামনে ডাকলেন। মুন্নি যেন অনেক বড় কবি হন বলতে পারেন কবিতায় মাটি ও মানুষের কথা সেই দোয়াও চাইলেন।
কবিতার ভাষা কতটা নান্দনিক আর হৃদয় স্পর্শী হলে একজন নির্যাতিত মানুষের জীবনের গল্পে উপস্থিত সবার চোখের জল ঝড়ানো যায় এবং হৃদয়কে নাড়া দিয়ে পাওয়া-না পাওয়ার হাজারও কষ্টগুলোকে ফুঁটিয়ে তোলা যায় তাই প্রমাণ করলেন কবি মুন্নি তার “আয়না উপাখ্যান” কবিতাটিতে।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই কবি যখন কবিতা আবৃত্তি শুরু করলেন তখন মঞ্চে খোশ গল্প করছিলেন কয়েকজন । কিন্তু কবিতার কয়েক লাইন না যেতেই চুপ হয়ে গেলেন সবাই। নিশ্চুপ হয়ে রইলেন এবং শুনলেন তার স্বরচিত কবিতার পুরো অংশ।
তার কবিতায় দুজন নারীর পতিতা জীবনে প্রবেশের গল্প, কষ্টের জীবন, সুখের নানান স্মৃতি ও শেষ বয়সে দুঃসহ যন্ত্রনার কথাই ফুঁটিয়ে তুলেছেন তিনি। হয়তো এ কারণেই পুরো কবিতা আবৃত্তির সময় সেই দুজন নারীর কন্ঠকে নিজের কন্ঠে মিশিয়ে তাদের কষ্টের কথাগুলো বললেন কখনও প্রতিবাদী কখনও নরম কন্ঠে।
চাইলেন এক মুঠো ভাত। বোঝালেন মানুষ কিভাবে একজন পতিতার দেহকে খুড়ে খুড়ে খায়, সেই কষ্ট কতটা ধুসর রঙয়ের। পেট কতটা আগ্রাসী হলে নিজের দেহকে বিক্রি করতেও দ্বিধাবোধ করে না একজন নারী।
উপস্থিত সবাইকে বোঝতে চেষ্টা করলেন একজন পতিতারও জীবন আছে, স্বপ্ন আছে, পেটের জ্বালা আছে। আছে অতীত জীবনের সুখময় স্মৃতিও। কিন্তু সমাজের কিছু মানুষ তা বুঝতে চেষ্টা করে না।
পরে জানা গেল তার কাছ থেকেই তার কবিতা রচনার প্রেক্ষাপট। জানা গেলো কাদের জীবনের করুণ গল্প হয়েছিল তার কবিতার উপজীব্য।
কবি কামরুন্নাহার মুন্নি বাংলানিউজকে জানান, তিনি যখন ঢাকায় এসেছিলেন তখন একটি মেসে উঠেছিলেন। পরিচয় হয়েছিল এক অপরিচিত বোনের সঙ্গে। কিন্তু সেই বোনের চলাফেরা তাকে সন্দেহভাজন মনে হতো। সেই থেকেই তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে শুনেছিলেন তার কষ্ট ভরা জীবনের গল্প। সেই বোনের জীবনের অংশটুকু তিনি তার কবিতায় যৌবনের উপমায় এবং বয়সের শেষ করুন পরিণতি ফুঁটিয়ে তুলেছেন তারই শহরের একজন নারীর জীবনকে কেন্দ্র করে।
কবি মুন্নির জন্ম নেত্রকোনার বিরিসিরি এলাকায়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকাকালীন সময় থেকেই কবিতা লিখতেন এবং গত ২০১৪ সালে তার স্বরচিত কবিতার বই ‘শুদ্ধ অবগাহন’ প্রকাশিত হয়েছে । তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন এবং শামসুন্নাহার হলে থাকেন বলেও জানালেন।
জাতীয় কবিতা উৎসবের সপ্তম পর্বে সভাপতিত্ব করেন কবি নাসির আহমেদ ।
তিনি তার বক্তবে বলেন, এখানে যারা কবিতা পড়লেন তারা বেশি করে কবিতা পড়বেন। গদ্য কবিতা হলেই যে তা আধুনিক কবিতা হবে তাও নয়। একটি ছন্দ কবিতাও হৃদয় নাড়া দিতে পারে। কে কবি আর কে কবি নয়, তা বলার ধৃষ্ঠতা আমার নেই।
এসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কবিরা তাদের কবিতা আবৃত্তি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২,২০১৬
এমআইকে/বিএস
** বিদেশি কবিদের কবিতায় শান্তির আহ্বান