ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কুড়িগ্রাম থেকে মেহেদী হাসান পিয়াস

ইউপি নির্বাচনে ভোট দিতে চায় দাসিয়ার ছড়াবাসী

মেহেদী হাসান পিয়াস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৬
ইউপি নির্বাচনে ভোট দিতে চায় দাসিয়ার ছড়াবাসী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দাসিয়ার ছড়া, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান দেশের মূল ভূ-খণ্ডে যুক্ত হওয়া (বিলুপ্ত ছিটমহল) দাসিয়ার ছড়ার অধিবাসীরা। একইসঙ্গে দাসিয়ার ছড়াকে স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষণার দাবিও জানাচ্ছেন তারা।


 
কুড়িগ্রামের সীমান্ত ঘেঁষা উত্তরের উপজেলা ফুলবাড়ী। এ উপজেলাটির মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে দাসিয়ার ছড়াকে। উপজেলা মানচিত্রে যুক্ত হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরাও নিয়মিত আনাগোনা করছেন দাশিয়ার ছড়ায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভোটাধিকার প্রয়োগে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে দাসিয়ার ছড়াবাসীর মধ্যে।
 
এদিকে এখন পর্যন্ত দাশিয়ার ছড়ার অধিবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি নির্বাচন কমিশন। তাই আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তারা আদৌ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

কোনো একটি এলাকাকে স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষণা করতে হলে যে তিনটি প্রধান শর্ত পূরণ করা আবশ্যক তা দাসিয়ার ছড়ায় নেই বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন। তবে দাসিয়ার ছড়াকে পার্শ্ববর্তী তিনটি ইউনিয়নে যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
 
গত ৫ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী সদর, কাশিপুর ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন পরিষদের সাথেই যুক্ত হচ্ছে দাসিয়ার ছড়া।  
 
স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের প্রধান তিনটি শর্ত কি জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, কোনো একটি এলাকাকে স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ করতে হলে সে এলাকায় কমপক্ষে ২০ হাজার লোকসংখ্যা থাকতে হবে। এলাকাটি কমপক্ষে ২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হতে হবে এবং কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার একটি তহবিল থাকতে হবে।
 
কিন্তু দাসিয়ার ছড়ার লোকসংখ্যা ৬ হাজার ৮৮৯ জন। মোট ভূমির পরিমাণ ১৬৪৩.৪৪ একর। তহবিলের ব্যবস্থা না হয় করা যেতো, কিন্তু আয়তন এবং লোকসংখ্যা তো নাই। তাই এটিকে স্বতন্ত্র ইউনিয়ন ঘোষণা করা যাচ্ছে না।
 
ইউপি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং স্বতন্ত্র ইউনিয়নের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল, বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান নাগরিক অধিকার সমন্বয় কমিটি, বাংলাদেশ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ ৬৮ বছর আমরা সমস্ত নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই।
 
স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ গঠন আইন ২০০৯ এর ধারা ১১ বলে শর্ত শিথিল করে দাসিয়ার ছড়াকে স্বতন্ত্র ইউনিয়ন ঘোষণা করতে পারে সরকার। ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কম আয়তন নিয়ে একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ দেশে গঠন করা হয়েছে। লোকসংখ্যাও সেখানে ২০ হাজারের কম।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ৬৮ বছর ধরে পিছিয়ে থাকা জনপদ দাসিয়ার ছড়া। সেখানে বিশেষ প্রণোদনায়, বিশেষ বিবেচনায় এবং শর্ত শিথিল করেই এই জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হবে।
 
স্বতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ গঠন সম্ভব না হলেও নির্বাচন পিছিয়ে অথবা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপে দাসিয়ার ছড়াবাসীর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান সাবেক ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি, দাসিয়ার ছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন।
 
বর্তমানে দাসিয়ার ছড়া আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বলেন, ভোটাধিকার একজন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই।
 
দাসিয়ার ছড়াবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে ওঠা দাসিয়ার ছড়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক মো. হামিদুল ইসলাম, মো. শাহনুর খন্দকার ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান।
 
স্কুলের অফিস কক্ষে তাদের সঙ্গে কথা হলে বাংলানিউজকে তারা বলেন, দাসিয়ার ছড়ার শতভাগ মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। নাগরিকত্ব পেলেও তাদের অধিকাংশেরই নির্বাচন কিংবা ভোটাধিকার সম্পর্কে ধারণা নেই। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে যেহেতু ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তাই সরকারের কাছে অনুরোধ- বিশেষ বিবেচনায় আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
 
হামিদুল, শাহনুরের কথার প্রমাণ পাওয়া গেলো পৌঢ় কয়েকজন নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেই। সুখীর মা ভুলেই গেছেন নিজের নাম। মেয়ের নাম সুখী বলে সবাই তাকে সুখীর মা বলেই ডাকে। নির্বাচন, ভোটের কথা কারো কাছে শোনেননি কোনোদিন।
 
একই বাড়ির বাসিন্দা ফজিলা বেগম ভোটের কথা শুনলেও বিগত জীবনের পরিচয়হীনতার কারণেই সে অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাননি। তবে ফজিলা বেগম এটা জানেন না, ভোট দিতে হলে ভোটার হতে হয়। তার আগে প্রয়োজন নাগরিকত্বের।
 
অভিজ্ঞতা না থাকলেও বৃদ্ধপ্রায় মো. বারেক মিয়া ধারণা রাখেন- নির্বাচন, ভোট প্রয়োগের বিষয়ে। কোনোদিন ভোট দেওয়ার সুযোগ না পেলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের আনাগোনায় তার মাঝেও ভোট দেওয়ার আগ্রহ জন্ম নিয়েছে। এরই মধ্যে তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থী নাকি ভোট চেয়ে রেখেছেন তার কাছে।
 
ভোটার হলে কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে সরল অভিব্যক্তিতে বলেন, সগাকে ভোট দিব!

** গ্লানি মুছে বর্ণিল হচ্ছে দাসিয়ার ছড়া

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
এমএইচপি/জেডএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।