ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন রেলগেট পার হয়ে ফুটপাত দিয়ে স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন রাজিয়া আক্তার। কিছুদিন আগেও এই সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়া তো দূরের কথা, যানবহন নিয়েই যাতায়াত করতে হিমশিম খেতেন তিনি।
বদলে যাওয়া এই সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে তেজকুনি পাড়া এলাকার রাজিয়া আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে ট্রাক থাকায় এদিক দিয়ে চলাচল খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিল। যানজটে আটকে থাকতে হতো। ট্রাক সরানোর পর থেকে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছি।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী রাজিয়া আক্তার সড়ক থেকে ট্রাক সরানোর পদক্ষেপে খুশি।
শনিবার সন্ধ্যায় ওই সড়ক দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় তার সঙ্গে। কোচিং থেকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। শুধু রাজিয়া নন, তার মতো একাধিক পথচারীসহ স্থানীয়রা গল্প শোনালেন নতুন চেহারায় ফিরে আসা এই সড়কের।
শুধু সড়ক থেকে ট্রাক সরিয়ে দায়িত্ব শেষ করেনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ (ডিএনসিসি)। পথচারীরা যেন আরও ভালোভাবে চলাচল করতে পারেন সে জন্য ফুটপাত মেরামত ও পরিষ্কার করা হচ্ছে।
আর যান চলাচল স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে ‘তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রেল লাইন পর্যন্ত রোড মিডিয়ান’ স্থাপন কাজও শুরু করেছে। এছাড়া সড়কটির মেরামতের কাজও চলছে।
প্রায় তিন বছর ধরে এই সড়কে রিকশা চালাচ্ছেন মো. শাহিন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখন তো সড়ক দিয়ে হরদম রিকশা, মানুষ যাইতাছে, আইতাছে। কিছুদিন আগে তো ট্রাক থাকায় খুব চাপাচাপি ছিল।
নিয়মিত এই সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া করা ট্রাক ভাড়াটিয়া আবদুর রাজ্জাক বলেন, দুই মাস আগে যেমন ছিল, এই সড়ক এখন পুরোটাই তার বিপরীত হয়ে গেছে। এতে সবাই খুশি। তবে ট্রাক স্ট্যান্ডে ট্রাক রাখতে গিয়ে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাক মালিকদের।
শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, ডিএনসিসি’র রোড মিডিয়ান স্থাপন কার্যক্রমের চিত্র। পথচারীর ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। আর রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, লেগুনা, আপন গতিতে ট্রাক চলছে। কোথাও থামতে হচ্ছে না। সড়কে কোথাও ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখতেও দেখা যায়নি।
ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সড়কে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে মানুষ আরও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবেন।
রিকশা চালক মো. আলম তার অতীতের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, সড়কে ট্রাকের কারণে চলাচল করতে বেগ পেতে হতো। রিকশার যাত্রী যদি ট্রাক চালককে একটু সরানোর কথা বলতেন, তখন ওই ট্রাক চালক যাত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। আর তারা কিছু বললে মাঝে মধ্যে মারধরও করত ট্রাক চালকরা।
তিনি জানান, আগে রেলগেট হতে সাতরাস্তা মোড়ে যেতে সময় লাগতো আধা ঘণ্টার বেশি। এখন পাঁচ থেকে ছয় মিনিট হলেই এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাওয়া যায়।
গত বছরের নভেম্বর মাসে ওই এলাকার সড়ক থেকে ট্রাক সরানোর অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। এরই ফল এখন ভোগ করছেন এলাকাবাসী ও পথচারীরা।
স্থানীয়রা জানান, এই সড়ক থেকে ট্রাক সরানো নিয়ে ট্রাক শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষেরও ঘটনা ঘটেছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের ঐকান্তিক চেষ্টাতেই নতুন চেহারায় ফিরেছে সড়কটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
একে/জেডএম