ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
বর্তমান সরকার অর্থকরী ফসল উৎপাদনের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন কৃষিমন্ত্রী।
বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর রাজধানীর আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মিলনায়তনে ‘কৃষি অর্থনীতি ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী।
ইউনিভার্সিটির এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাব এ সেমিনারের আয়োজন করে। এছাড়া ক্লাবটির উদ্যোগে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে কৃষিভিত্তিক ‘এগ্রো বিজ এক্সপো ২০১৬’ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে আওয়ামী সরকার দেশ পরিচালনা শুরু করে। পরবর্তী পাঁচ বছর কৃষিভিত্তিক নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরপর সরকার পরিবর্তন হওয়ায় কৃষিতে ফের ভাটা পরে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ এসে কৃষির উন্নয়নে কাজ শুরু করে। তারই ফলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণেই আজ দেশ খাদ্যে এত সফলতা অর্জন করেছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, এক সময়ে ব্যাংকের কাছে গিয়ে কৃষককে ধর্ণা দিতে হতো। এখন ব্যাংকই কৃষকের কাছে যায়। এটা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কারণে।
তিনি বলেন, আমরা অর্থকরী ফসল উৎপাদনের দিকেই বেশি মনোযোগ দেব। এক সময়ে হাইব্রিড, বায়োটেক ও জিএম’র বিরুদ্ধে নানা কথা বলা হতো। কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো খারাপ কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই তাদের কথা যদি শোনা হতো তাহলে দেশ আজ খাদ্যে এই সফলতা অর্জন করতো না।
বিদ্যুতের ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গ্রাম,গঞ্জে যেভাবে ফেরিওয়ালারা বলেন ‘চুড়ি নিবেন, চুড়ি’। কিছুদিন পরে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য সবাই বলবে, ‘বিদ্যুৎ নেবেন, বিদ্যুৎ’।
নতুন উদ্যোক্তাদের অনেকের মধ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা আছে মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রাইভেট সেক্টরে কিছু উদ্যোক্তা আছেন যারা ভেজাল পণ্য নিয়ে ব্যবসা করে থাকে। এটা হতে দেয়া যাবে না। পণ্য যদি বাজারে নিতে হয় তাহলে ভালো পণ্যেই নিতে হবে। সততা নিয়ে ব্যবসা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, আধুনিক ও প্রযুক্তিসম্পন্ন জ্ঞান অর্জন করে কৃষকরা যেন তাদের কৃষিপণ্য শিল্প পণ্যে পরিণত করতে পারেন সেদিকে নজর দিতে হবে। এতে কৃষকের পণ্যের ন্যায্য মূল্যও নিশ্চিত হবে। কৃষিপণ্যকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার আহ্বানও জানান এই বক্তা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, আমাদের দেশের কৃষকরা সৃষ্টিশীল। এক সময়ে তাদের অবজ্ঞা করা হতো। কিন্তু কৃষকরা প্রমাণ করে দিয়েছে, তারা অনেক কিছু পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এম আনিস উদ-দৌলা বলেন, কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় খাত হলো কৃষি। ফসলের বীজে যে বিরাট সুযোগ আছে সেটা আমরা এখনো অর্জন করতে পারি নি। এ বিষয়টি অবশ্যই আমাদের ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে শতকরা ২৫ ভাগ বীজ সরবরাহ করা হয়। আর বাকি অংশ কৃষক নিজেই তৈরি করে মাঠে প্রয়োগ করছে। কিন্তু কৃষকদের বীজে উৎপাদনের পরিমাণ খুব বেশি হচ্ছে না। তাই বীজ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে মজবুতভাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি কৃষকদেরও প্রশিক্ষিত করে তোলা উচিত।
সেমিনারের শুরুতে ওই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাইসা আজাদ সেরা’র সঞ্চালনায় কৃষিভিত্তিক একটি প্রামাণ্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য্য অধ্যাপক এম এম শহীদুল হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
একে/আরআই