ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যয় ২৫১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা

এশিয়ান হাইওয়ে নিরাপদ করতে ‘ক্রসবর্ডার নেটওয়ার্ক’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬
এশিয়ান হাইওয়ে নিরাপদ করতে ‘ক্রসবর্ডার নেটওয়ার্ক’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

ঢাকা: নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ৮টি মহাসড়কের ৬০০ কিলোমিটার সড়ক। ওই ৬০০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে ‘ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক ২ হাজার ৫১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প।



এশিয়ান হাইওয়ের আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপদ আন্তঃদেশীয় সড়ক যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ নিশ্চিত করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মায়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওই ৮টি মহাসড়ক। ৬০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কগুলোর সীমানা মিলিত হয়েছে ভারত সীমান্ত। যে কারণে প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্রসবর্ডার’।

এ সড়কগুলোতে অসংখ্য সেতু ও কালভার্ট রয়েছে, যেগুলো বহু বছরের পুরনো ও জরাজীর্ণ। সেগুলো নতুনভাবে নির্মাণ অথবা মেরামত করা হবে। এরপর প্রতিটি সড়ক চারলেনে রূপান্তর করা হবে।

২ হাজার ৫১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে সরকারি খাত থেকে আসবে ৬৬২ কোটি ৬১ লাখ এবং জাইকা’র ঋণ থেকে আসবে ১ হাজার ৮৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর।

সওজ সূত্র জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে এশিয়ান করিডোর-১ ও এশিয়ান হাইওয়ে করিডোর-৪ এর ১৭টি অ্যাপ্রোচ সড়কে অবস্থিত ১৭টি মাঝারি আকারের সেতু ও সাতটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।   ইক্যুইপমেন্ট অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স, আড়াই হাজার বর্গমিটার কোর অফিস বিল্ডিং, একটি টোল গেট, দু’টি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন ও ৫৫২ সিটি নির্মাণ এবং ৫৫২ জন  নিরাপত্তাকর্মীসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া চারটি পিক-আপ, ৮টি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাস কেনা হবে।

এশিয়ান হাইওয়ের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যশোর জেলার শার্শা ও ঝিকরগাছা, নড়াইল জেলার সদর ও লোহাগড়া, গোপালগঞ্জের সদর ও কাশিয়ানী, চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, পটিয়া ও চন্দনাইশ এবং কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পের আওতায় এসব উপজেলার ৩০ দশমিক ৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন করবে সওজ।
 
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, ৮টি মহাসড়কের বিভিন্ন রুটে অসংখ্য জরাজীর্ণ সেতু রয়েছে, যেগুলো নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অনেক জরাজীর্ণ কালভার্ট ও ছোট ছোট সেতু দেখলে মনে হবে ভেঙে পড়বে। প্রকল্পের ‍আওতায় সেগুলোও নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। এশিয়ান হাইওয়ের মান রাখতে হলে সেতুগুলো নতুনভাবে নির্মাণ করা জরুরি। জরাজীর্ণ সেতু নির্মাণ করার পর প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি সড়ক চারলেনে রুপান্তর করবো। সে লক্ষ্যে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছি।
 
এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে যান চলাচল নিরাপদ এবং অর্থনৈতিক জোনের সঙ্গে সড়ক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ক্রসবর্ডার নেটওয়ার্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সড়কের প্রতিটি সীমানা ভারত সীমান্তে মিলিত হয়েছে। যে কারণে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্রসবর্ডার নেটওয়ার্ক’।

সওজ সূত্র জানায়,  সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক নীতিমালার উদারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে উচ্চ সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক জোন তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলের প্রায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন জনগোষ্ঠী তাদের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী। দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নও প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
 
বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, নেপাল, মায়ানমার, এবং ভুটানের মাঝামাঝি। তাই দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা এদেশের উন্নয়নের জন্যই প্রয়োজনীয়। তাই এ মহা উদ্যোগ। অন্যদিকে আন্তঃঅঞ্চলীয় যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখতে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

সওজ সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রায় ৭০ শতাংশই সড়কপথ নির্ভর। এশিয়ান হাইওয়ের মতো আন্তর্জাতিক সড়কপথ বাংলাদেশে মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। অথচ দেশের বিভিন্ন সেক্টর, কাস্টমস, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ত। এমনকি অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত এলাকার জরাজীর্ণ রাস্তা ও সেতুর বেহালদশার জন্য আন্তর্জাতিক সড়কপথগুলোতে সঠিকভাবে যান চলাচল সম্ভব হচ্ছে না।
 
সেজন্যই এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী, অস্থায়ী সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে আঞ্চলিক ট্রানজিট যানবাহন চলাচলের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থায়ী অবকাঠামোর উন্নয়ন করাও সরকারের পরিকল্পনায় আছে।
 
সওজ আরও জানায়, বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একটি আধুনিক ও কার্যকরী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও দেশে কিছু সড়ক ও সেতু উন্নয়নের কাজ চলমান থাকা সত্ত্বেও সমস্যার নিরসন সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সড়কপথ এবং সেগুলোর সংযোগকারী সড়ক উন্নয়নের জন্য জাপান সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করেছিল। সেদেশের সাহায্য সংস্থা জাইকা’র সহায়তা পাওয়ার পর প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।