ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলুন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬
শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলুন

ঢাকা: দেশপ্রেম, ন্যায়নীতি শিক্ষা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের চরিত্রবান, সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তারা যেন মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সবাইকে সেদিকে খেয়াল রাখতেও বলেছেন তিনি।



বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাসপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

‘মানসম্মত শিক্ষা, জাতির প্রতিজ্ঞা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ।

শিক্ষকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো, ন্যায়-নীতিবান ও আর্দশ নিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারা যেন সেই চর্চা করে সেদিকে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। ছেলে-মেয়েরা যেন বিভ্রান্তির পথে না যায়। মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস অথবা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে যেন জড়িত না হয়।

স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, সব জায়গায় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম কখনও বলেনি সুইসাইড করো। যে সুইসাইড করবে সে দোজখে যাবে।

তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের নামে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন এসব থেকে দূরে থাকে। তাদের কেউ যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে।

আগামী দিনে জাতির ভবিষ্যৎ হিসেবে ছেলে-মেয়েদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যারা শিশু তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের চরিত্র আরও উন্নত হতে হবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে, দেশে-বিদেশে তারা বাঙালি জাতির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে, সেভাবে ছোটবেলা থেকে তাদের গড়ে তুলতে হবে।

শিক্ষকদের মহান দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকতা হচ্ছে মহান পেশা। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার ছেলে-মেয়ে দরকার, সেই সোনার ছেলে গড়ার কারিগরই হচ্ছেন আমাদের শিক্ষকরা।

কক্সবাজারে লিডারশিপ ট্রেনিং সেন্টার নির্মিত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লিডারশিপ ট্রেইনিং ছোট বেলা থেকে দেওয়া হচ্ছে। আজকের শিশু যারা, তারাই আগামী দিনে বাংলাদেশের লিডারশিপ দেবে। তারাই একদিন বড় হবে, তারাই দেশের কর্ণধার হবে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, ভালো শিক্ষক, বিজ্ঞানী হবে। নানা ধরনের ক্ষেত্রে তারা যাবে। তাদের ছোট বেলা থেকে শিক্ষার বিষয়ে নজর দিতে হবে। লিডারশিপ ট্রেইনিংটা যেন ছোট বেলা থেকে গড়ে ওঠে।

সরকার প্রতিবন্ধীদেরও লেখাপড়ার ব্যবস্থা করছে জানিয়ে সবাইকে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদিন পড় পড় করলে হবে না। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।

নিরক্ষরতামুক্ত দেশ গড়ার পদক্ষেপ বিষয়ে তিনি বলেন, একটি একটি জেলা ধরে প্রতিটি জেলা নিরক্ষরতামুক্ত করার অভিযান আমরা শুরু করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এসে সেই ধারায় বাধা সৃষ্টি করে। ১৯৯৬ সালে নিরক্ষরতার হার ছিলো ৪৫ শতাংশ। পরে ৬৫ শতাংশে উন্নীত করি। একটি দেশ তো এগিয়ে যাবে। এতো পিছিয়ে যায় কী করে? ২০০৯ সালে এসে আবার কাজ শুরু করেছি।

এসময় স্বাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। ।

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার কমাতে স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করতে সমাজের ধনী ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এজন্য অনুদানের অপেক্ষায় না থেকে স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি করে ফান্ড গঠন করতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন কি একই বিস্কুট খেতে ভালো লাগে? তাদের খাবারেও একটু পরিবর্তন ‍আনা দরকার। প্রত্যেক স্কুলের কমিটি যদি এগিয়ে আসে, স্কুলের বাচ্চাদের খাবার তৈরি করে দেন, তাহলে পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ করছি। বই কিনতে বাবা-মায়েদের কষ্ট হতো। এটা তাদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা ছিলো। তাই আওয়ামী লীগ সরকারই দায়িত্বটা নিয়েছে। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তকও করা হয়েছে, যেন তারা তাদের ভাষায় পড়তে পারে।

এ বছর ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২টি নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সুযোগ বাড়ানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে বিদ্যালয় নেই, সেখানে আমরা বিদ্যালয় করে দিয়েছি। তাছাড়া স্কুলগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি সুবিধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন দেশে উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ৯১টি শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, দেশের ৫২টি জেলার ১৪৮টি উপজেলায় ১ হাজার ১৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ হাজার ৫৬৭টি আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আনন্দ স্কুলে বিনামূলে বইয়ের পাশাপাশি বিনামূল্যে পোশাক ও উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে আনন্দ স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৩৬ জন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে আমরা জাতীয় শিক্ষানীতি করি। এতে ধর্মীয় শিক্ষাও আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। এই প্রথম আমরা একটি শিক্ষানীতি করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট করেছি। সেই ট্রাস্ট থেকে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা হয়।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। স্কুলগুলোকে আমরা ডিজিটালাইজ করছি। যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। প্রাথমিকে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

দেশের সব বিদ্যালয়কে ডিজিটালাইজ করা হবে বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সুবিধার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হতো। সে পদ্ধতিতে আমরা পরিবর্তন এনেছি। এখন সবাই বোর্ড পরীক্ষা দিচ্ছে। আগে এসএসসিতে প্রথম বোর্ড পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ভয় পেতো। এখন আর সে ভয় নেই। পাসের হার ৯৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী ১৯ ক্যাটাগরিতে ১৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রদান করেন।

এছাড়া, আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় একক, অভিনয়, উপস্থিত বক্তৃতা, পল্লীগীতি, আঞ্চলিক গান, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্যে প্রতিটি বিভাগে ছয়জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। কাব শিশু হিসেবে তিনজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

পাশাপাশি আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ১০০ মিটার দৌড়, দীর্ঘ ও উচ্চলাফ, ভারসাম্য দৌড়, বল নিক্ষেপ, অংক দৌড় ও মোরগ লড়াইয়েও প্রত্যেক বিভাগে ছয়জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পদক ও পুরস্কার তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ।

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপন করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
এমইউএম/এইচএ

** ১৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক শিক্ষা পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী
** শিশুরা যেন জঙ্গিবাদে না জড়ায়
** বেনাপোল ইমিগ্রেশনে জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে আগাম সতর্কতা
** ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ে তুলছিলেন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।