ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘চাইলাম বিচার, দিলেন লাশ’

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬
‘চাইলাম বিচার, দিলেন লাশ’ ছবি: দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘আমার বাবার হত্যার বিচার চেয়েছি, দিলেন লাশ’- ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বাবা বাবুলের মরদেহের পাশে এমনই আহাজারি করছিলেন বড় ছেলে রাজু।

রাজধানীর শাহ আলী থানা পুলিশের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বর।

বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বাবুলের পরিবারের অভিযোগ, শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের নেতৃত্ব পুলিশ সদস্য ও পুলিশের সোর্স গায়ে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করেন।

বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর গুদারাঘাট এলাকায় নিজের দোকানে স্টোভের আগুনে দগ্ধ হন বাবুল মাতুব্বর (৪৫)। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তখন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, বাবুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বুধবার বার্ন ইউনিটে ভর্তির পর থেকে এসআই শ্রীধামসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও সোর্সের বিচারের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবুলের পরিবারের লোকজন।

বাবুলের দুই ছেলে তিন মেয়ে। বৃহস্পতিবার মরদেহের পাশে বড় ছেলে রাজু চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আমার বাবাকে মেরে ফেলেছেন শাহ আলীর পুলিশ ও পুলিশ সোর্সরা। আমার বাবার কি অপরাধ? ফুটপাতে চা বিক্রি করেন, পুলিশকে চাঁদা দিতে পারেননি?’

কান্নাজড়িত কন্ঠে রাজু বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী পারুল ওরফে পারুলী। আমরা পাশাপাশি থাকি। পারুলীর অনেক কাস্টমার আমাদের বাসায় এসে গাঁজা কিনতে চান। জিজ্ঞেস করেন, গাঁজা দেন, পারুলী কই? এতে আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে পারুলীর ব্যাপারে থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করি। এ অভিযোগের সূত্র ধরে ও ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার আরো দুই পুলিশ কনস্টেবল ও পুলিশ সোর্স দেলোয়ারকে নিয়ে গতরাত সাড়ে নয়টার দিকে আমার বাবার দোকানে যান’।

রাজু বলেন, ‘এগুলো আমাদের কথা নয়, আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের বলে গেছেন। তখন এসআই শ্রীধাম আমার বাবাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। বলেন, ফুটপাতে দোকান করিস, চাঁদা দে। পুলিশ সোর্স দেলোয়ার এ সময় আমার বাবার হাত ধরে টানছিলেন। অপর এক পুলিশ কনস্টেবল জলন্ত স্টোভের চুলায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেন। তখন স্টোভের চুলা ফেটে আমার বাবার গায়ে আগুন ধরে যায়। আগুন ধরা অবস্থায় আমার বাবা এক পুলিশ কনস্টেবলের কলার ধরে বলেন, ‘তুই আমার গায়ে আগুন দিলি’। তখন কনস্টেবল বলেন, আমি আগুন দেইনি, এটা একটা দুর্ঘটনা। এ বলে সবাই সেখান থেকে দ্রুত সটকে পড়েন’।

এ বিষয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ওখানে যাইনি।

শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শাহীন মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, এসআই শ্রীধাম ঘটনার সময় ছিলেন না। ঘটনার পর গিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, মাদক ব্যবসায়ী পারুলীকে আমরা আটক করেছি। একটি মামলা হয়েছে। পারুলীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
এজেডএস/আরইউ/এএসআর

** অগ্নিদগ্ধ চা দোকানির মৃত্যুর ঘটনায় ৪ পুলিশ প্রত্যাহার
** পুলিশের হামলায় অগ্নিদগ্ধ চা দোকানির ঢামেকে মৃত্যু
** স্টোভের আগুনে চা দোকানি দগ্ধ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।