ঢাকা: নানা ভাষাভাষী মানুষ, বহুমাত্রিক শিল্পকর্ম। যার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বিভিন্ন ঘটনা।
শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলার চিত্রশালায় ঢাকা আর্ট সামিটের চার দিনব্যাপী চলা প্রদর্শনীর বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরে এমনটাই দেখা যায়। এটি আয়োজন করেছে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন।
বিভিন্ন শিল্পী তাদের চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন জীবনের গল্পকে, তুলে এনেছেন সমাজের ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিচ্ছবি। তারই প্রমাণও পাওয়া গেল নয়াদিল্লির রিতু সারিন ও তানজিং সোনামের তোলা ফটোগ্রাফিতে।
১৯৬৩ সালে ভিয়েতনামের সাইগনের রাস্তায় ভিক্ষু থিচ কুয়াং ড্যু যে চিঠি লিখেছিলেন, সেই চিঠির ভিত্তিতে দেশটির রাজনৈতিক বিদ্রোহের চিত্রও তুলে আনা হয়েছে।
শিল্পী নেহা চকশি আর তার এইচডি ভিডিওতে বোঝাতে চেয়েছেন ভিন্ন কিছু। তিনি তার ভিডিওতে একজন শিল্পী কীভাবে চারটি প্রাণিকে অসাড় করতে পারে তা দেখিয়েছেন। তবে ‘মাইন্ডস টু লস’ শিরোনামের এ পরিবেশনায় কোনো প্রাণি হতাহত হয়নি সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে।
কেউ বিদেশি মিউজিয়াম ঘুরে যা দেখেছেন, সেটিও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। সেই শিল্পকর্মের নামও দিয়েছেন ‘মিউজিয়াম অব চান্স’। তাদেরই একজন ভারতের নয়াদিল্লির দায়ানিতা সিং। প্রদর্শনীস্থলে তার দেখা না পাওয়া গেলেও তার শিল্পকর্মগুলো অনন্য স্মৃতিকে ধরে রাখার কথাই বলছে।
তবে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দর্শনার্থীরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য রয়েছে ম্যাপ। সেই ম্যাপ দেখে সহজেই বিদেশি ও দেশি দর্শনার্থীরা পুরো প্রদর্শনী কীভাবে ঘুরবেন তাও দেখে নিচ্ছেন একঝলকে।
বিদেশি শিল্পীরা যেমন তুলে এনেছেন প্রকৃতির মায়াময় ও বৈচিত্র্যময় নানা অনুসঙ্গকে, তেমনি বাংলাদেশিদের একজন তার শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রায় বছর তিন আগে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভবন ধস ‘রানা প্লাজা’র করুণ চিত্র।
সেই শিল্পী বড় বড় পলিথিনে বাতাস ঢুকিয়ে ফুলিয়ে তুলেছেন। এরপর একটি চলমান কাঁচের তৈরি বড় গোল ঘড়ির ওপর বিভিন্ন আলো ফেলে তার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছেন সেই পলিথিনগুলো। আর পলিথিনের গায়ে নিহতদের নাম ঠিকানা লিখে বোঝাতে চেয়েছেন ওইদিন এভাবেই নিখোঁজদের স্বজনরা তাদের খুঁজেছিলেন। এটা ছিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনার রূপক চিত্র।
এ শিল্পকর্মে তিনি রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনার দিন শত শত গার্মেন্টস কর্মীদের ভবনের ভিতরে আটকাপড়া যন্ত্রণা, আকুতি, ছটফটানিসহ নানা চিত্র চিত্রায়িত করেছেন।
চারটি ফ্লোর নিয়ে চলছে এ প্রদর্শনী। দুপুরে বিদেশি দর্শনার্থীদের তেমন ভিড় না থাকলে বিকেলে থেকে বাড়ছে ভিড়। বিদেশি ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছে শিল্পপ্রিয় মানুষ।
ঢাকার উত্তরা থেকে আসা মুমতাহিনা আরজু বলেন, এ প্রদর্শনীস্থল তো একদিনে শেষ করা কঠিন। তবুও ঘুরছি দরকার হলে আবার কাল আসবো। তারপরও সব শিল্প দেখতে চাই।
পৃথিবীর বহু দেশের শিল্পীদের শিল্প নিয়ে প্রদর্শনী চলছে শুনেই এসেছেন মোহাম্মদপুরের দম্পতি জান্নাতুল ফেরদৌসী ও জাকির আহমদ। তারা জানালেন, দুপুর থেকে মাত্র দু’টি গ্যালারি তারা ঘুরেছেন। আরও বাকি আছে দু’টি। এ দু’টি শেষ করেই তবে ত্যাগ করবেন প্রদর্শনীস্থল।
জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, এমন প্রদর্শনীতে না আসলেও তো পৃথিবীর বড় মাপের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখতে পারতাম না। বিনা টাকায় এত কিছু দেখতে পারছি সত্যি খুব ভালো লাগছে।
আয়োজক সংঠনের চেয়ারম্যান নাদিয়া সামদানী বাংলানিউজকে বলেন, এখানে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ছাড়াও পৃথিবীর ৮০টিরও বেশি দেশ থেকে বিভিন্ন শিল্পের শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্মগুলো তুলে ধরেছেন। এজন্য এই প্রদর্শনীকে বহুমাত্রিক শিল্পের সমাবেশ বলা যেতে পারে।
তৃতীয়বারের মতো বিশ্বের দক্ষিণ এশীয় আর্টের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী নিয়ে শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চার দিনব্যাপী শুরু হয়েছে ঢাকা আর্ট সামিট-২০১৬। প্রদর্শনী চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিল্পী, কিউরেটর, লেখক, আর্ট প্রফেশনাল এবং কালেক্টর অংশ নিয়েছেন।
ঢাকা আর্ট সামিটে বিশ্বের নামকরা প্রায় ৮০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, সেন্টার পম্পিদৌ ফ্রান্স, রকফেলার ফাউন্ডেশন, নরওয়েজিয়ান মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, সুইস আর্টস কাউন্সিল উল্লেখযোগ্য।
এবারের প্রদর্শনীতে বাংলাদেশর ১৩ জন চিত্রশিল্পীর নিজস্ব আঁকা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে একজনকে সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হবে।
প্রদর্শনীটি সবার জন্য উম্মুক্ত রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে প্রদর্শনী চলবে রাত ১০টা পযন্ত। প্রদর্শনীতে বাংলাদশি স্থাপতিদের বিশ্বের দরবারে তাদের পরিচিত করতে স্থপতিদের নিয়ে একটি প্রদর্শনীও থাকছে সামিটের আলাদা একটি কর্নারে। যেখানে বাংলাদেশের ১৭ জন স্থাপতির করা বিভিন্ন ডিজাইন স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬
এমআইকে/টিআই