ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সম্পদের ঘনীভবন বৈশ্বিক হুমকি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
‘সম্পদের ঘনীভবন বৈশ্বিক হুমকি’

ঢাকা: জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান  জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।



তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের লোক স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে। এখানে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব সর্বজনীনভাবে পালিত হয়। আমরা এই ঐতিহ্য রক্ষায় কখনোই কাউকে ছাড় দিতে পারি না।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ এখন আর কোনো দেশের একক ভূখণ্ডের সীমানার মধ্যে সীমিত নেই। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদসহ সব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধ ও স্থানীয় পর্যায়ের সব অপরাধ উদঘাটন ও প্রতিরোধে গণমাধ্যমকেও সর্বশেষ প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ যাতে অশুভ কিছু করতে না পারে, সে ব্যাপারেও গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে।

সমাজে সংবাদপত্রের ভূমিকা সম্পর্কে আবদুল হামিদ বলেন, জনসাধারণকে সঠিক তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে তাদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সংবাদপত্রের ভূমিকা সহায়ক হতে পারে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যু সম্পর্কে জনমত সৃষ্টিতে তাদের ভূমিকা রয়েছে। আমি আশা করি, সব গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করে দেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখবে।

আবদুল হামিদ বলেন, সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সৎ সাহসই পারে একজন সাংবাদিককে পেশাগত উৎকর্ষের শীর্ষে নিয়ে যেতে। আপনারা সরকারের, এমনকি আমারও সমালোচনা করুন। তবে সেই সমালোচনা যেন হয় তথ্যভিত্তিক। কোনোভাবেই যেন একপেষে না হয়।

সংবাদপত্রের ওপর যেকোনো হামলা, গণতন্ত্রের ওপর মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। আমরা চাই, সংবাদপত্র দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করবে- যোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, মিডিয়া ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের চেয়ারপারসন রোকেয়া আফজাল রহমান, ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার, ন্যাশনাল মাল্টিমিডিয়া গ্রুপের সম্পাদকীয় ও ব্যবস্থাপনা বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা সুথিচাই সায়ে ইউন, কস্তুরি অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ভারতের হিন্দু প্রকাশনা গ্রুপের প্রকাশক এন রাম এবং ওই ইংরেজি দৈনিকটির সম্পাদক ও প্রকাশক রাখেন।

এদিকে, শুক্রবার রাতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় পত্রিকাটির আরও একটি অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

‘সম্পদের ঘনীভবন কি বন্ধ করা যাবে’ শিরোনামে বক্তৃতায় ড. ইউনূস বলেন, সম্পদের ঘনীভবন একটি বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ৯৯ শতাংশ সম্পদ ১ শতাংশ মানুষের হাতে। ফলে সম্পদের ঘনীভবন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। শুধু বৈশ্বিকভাবেই যে এটা ঘটছে, তা নয়, দেশের ভেতরে এবং এক দেশের সঙ্গে অন্যদেশের ক্ষেত্রেও ঘটছে। জাতিতে জাতিতে সম্পদের বৈষম্য বৈশ্বিক শান্তির জন্য হুমকি হয়ে সব সময়ই ছিল। ফলে দ্বন্দ্ব, সংঘাত এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত বেঁধেছে। কোনো জাতি আতঙ্কিত হলে তারা সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে, এই ব্যয় বৃদ্ধি উদ্বেগজনকভাবেই বিশাল। বিশ্বে সামরিক ব্যয় এখন ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অংশই ৩৯ শতাংশ। সম্পদের ঘনীভবন আরো প্রকট হলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে সশস্ত্র সংঘাত আসন্ন হয়ে উঠতে পারে। এ পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।

বৈশ্বিক উষ্ণতা একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘দু’টি সমস্যার শিকড়ই এক জায়গায়- ত্রুটিপূর্ণ অর্থনৈতিক কাঠামো, যার ভিত্তি মানুষের লোভ-লালসা। যত্নশীল এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে নিজেদের তৈরি করে- এমন একটি আর্থিক আবহ সৃষ্টি করে আমরা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত তিন শূন্য- শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ। এমনই একটি বিশ্ব আমরা তৈরি করব, যেখানে সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ থাকবে। শান্তি ও সুখ তখনই সম্ভব হবে, যখন নাগরিকরা একসঙ্গে কর্মোদ্যম শুরু করবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
টিআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।