ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ছোট’র চাই ছবির বই, বড়জনের বৈজ্ঞানিক কল্পকথা

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
ছোট’র চাই ছবির বই, বড়জনের বৈজ্ঞানিক কল্পকথা ছবি : রানা/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ছোটজন ঘুরে ঘুরে বই ঘেঁটে দেখছে, ছবি ভালো লাগলেই কেবল ব্যাগে ঢুকবে বইটি। আর বিজ্ঞানভিত্তিক মজার মজার কল্পকাহিনী পেলে লুফে নিচ্ছে বয়সে একটু বড় শিশুরা।



এ চিত্র অমর একুশে গ্রন্থমেলার শিশুপ্রহরের। শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) ও শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) শিশু প্রহর চলেছে বইমেলায়। এ দু’দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলা তাই ছিল শুধুই ছোটদের।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেলার জৌলুস বাড়িয়ে দিয়েছিল শত শত কচিপ্রাণ। শনিবার সে তুলনায় কিছুটা কম হলেও একদম কম বলা যায় না।

শিশুদের কারও চোখে পছন্দের বই খুঁজে বেড়ানোর আনন্দ, কারও আবার বেড়াতে এসে পছন্দের বই পেয়ে যাওয়ার। কেউ খুশি সিসিমপুরের ইকরি-হালুমকে দেখে, কেউ আবার খোলামেলা প্রাঙ্গণে ধুপধাপ ঘুরে। ছোট শিশুদের জন্য তৈরি সবুজ শিশু কর্নারটি বেশ পছন্দ তাদের। একটু পর পর লাইনে লাইনে ‘রেলগাড়ি ঝমাঝম’ খেলছে।

স্টল ঘুরে বয়স অনুযায়ী তাদের পছন্দের কিছু সাদৃশ্য পাওয়া যায়। দেখা মেলে কয়েকটি পরিবারের। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী শিশুদের নিয়ে মেলায় ঘুরছেন মা-বাবা। তবে একটি বিষয় কয়েকজনের মাঝে একই। ছোটজন ঘুরে ঘুরে ছবির বই পছন্দ করছে। তার ভালো-মন্দ পুরোটাই ছবিতে নির্ভর। রঙগুলো তার নজর কাড়তে হবে। মা বাবার হস্তক্ষেপেও তার পছন্দ বদলাচ্ছে না।

আর বড়জনের পছন্দ বিজ্ঞানভিত্তিক রূপকথার বই। নানা স্বাদের গল্প খুঁজছে তারা। শুধু নতুন আসা বই থেকে নয়, পুরনো বই ঘেঁটেও বেছে নিচ্ছে তারা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে মা-বাবার সঙ্গে এসেছে শবনম তহুরা (১৩) ও শাবনাজ তহুরা (০৪)।

শবনম মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন ‘ক্রেনিয়াল’ কিনেছে। বুঝে-শুনে ঠিক করছে, আর কোন বইটি কেনা যায়। কিন্তু শাবনাজ কোনো বইয়ের প্রচ্ছদে ছবি দেখেই পছন্দ করে মায়ের ব্যাগে ঠেলে দিচ্ছে। আবার কোনো বইয়ের মলাট উল্টে ভেতরের ছবি দেখে নিচ্ছে।

শবনম বলে, কয়েকটি বই পড়বো বলে খুঁজেছি। বন্ধুরা পড়ে ভালো বলেছে। ওগুলো কিনবো। সায়েন্স ফিকশন খুব ভালো লাগে। তবে ইনিয়ে-বিনিয়ে লেখাগুলো ভালো লাগে না।

বাংলা একাডেমিতে শেখ রাসেল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মো. আক্কাস শনিবারের শিশুপ্রহরে বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল (শুক্রবার) ও আজ আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক বইগুলো বেশি নিচ্ছে বাবুরা। খুব ছোট বাচ্চারা রঙিন ছবির বইগুলো পছন্দ করছে। ছবির স্কেচ করা বইগুলোও নিচ্ছে ছবি আঁকা শিখতে।

শনির আখড়া থেকে বাবার সঙ্গে এসেছে সানশাইন নার্সারি স্কুলের নার্সারির ছাত্রী মুমতাহিনা রিতু। খুব ছোট বা বড় শিশু নয় বলেই হয়তো একই সঙ্গে বিজ্ঞান ও ছবির বই কিনেছে বেশ কয়েকটি।

বাবা কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকে গল্প শুনতে পছন্দ করে। এ কারনে রূপকথার বই, বিজ্ঞানভিত্তিক রূপকথার বই কিনে দেই। বই পড়ার অভ্যাসটা ভালো করে ধরলে বাচ্চারা কখনো নষ্ট হয় না।

রিতু স্কেচবুক কিনেছে কয়েকটি। ছবি আঁকা অনুশীলনের এ বইগুলো তার সব বন্ধুদের আছে।

মেলার সোহরাওয়ার্দী অংশে আদিগন্ত প্রকাশনী, সেখানেও একই চিত্র পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত তাদের ২২টি নতুন বই এসেছে। সামনে আরও আসবে বলে বিক্রেতারা জানান।

মিরপুরের শিল্পী আরা নিজেই সন্তানদের বয়স অনুযায়ী বই কিনে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট বাচ্চার বয়স ৩ বছর। তার জন্য রঙিন ছবির বইগুলো নিচ্ছি। দেখে দেখে বিভিন্ন জিনিস চিনতে শিখবে। বড় বাচ্চা সিক্সে পড়ে। ওর জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক বই কিনছি। সামনে সায়েন্সে পড়াবো। এখন থেকে আগ্রহ তৈরি হোক’।

খিলক্ষেত থেকে এসেছে সাড়ে তিন বছরের সুপ্রভ ইব্রাহিম। ৩৮০ টাকার বই কিনেছে সে। সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস, দ্য লিটল চিক, আমরা পার্কে বেড়াতে গেছি, দ্য ডার্টি মিরর, পেটুক রোবট, ডায়নোসর জগ- স্টল ঘুরে এ বইগুলো পছন্দ করে মা কুদসিয়া সিরাজীর হাতে দিয়েছে।

তাদের দেখা পাওয়া যায় সোহরাওয়ার্দীর ওয়ার্ল্ড অব চিলড্রেনস বুক লিমিটেড স্টলে।

বিক্রেতা সাদেকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, ছোট বাচ্চারা রঙিন ছবিওয়ালা বই বেশি কেনে। বড় বাচ্চারা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পছন্দ করে। সে ভিত্তিতে বই রেখেছি। দু’দিন মিলিয়ে এসব বইয়ের কাটতি ভালো। আগামী শিশু প্রহরগুলোতে আরও বেশি বিক্রি হবে আশা করছি’।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
এসকেএস/এএসআর

** ছোটদের পদচারণায় মুখর মেলার শিশু কর্নার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।