ঢাকা: কার স্বার্থে একাত্তরে পাকিস্তানিদের গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধকে বিএনপি নেত্রী খাটো করে দেখার চেষ্টা করছেন? তা জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের বিক্ষোভ সমাবেশ অংশ নিয়ে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
সকালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এরপর আন্দোলনকারীরা বনানী মাঠ সংলগ্ন মঈনুল হোসেন বীরবিক্রম সড়কে অবস্থান নিয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ সমাবেশটি করেন।
তুরিন আফরোজ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কাদের স্বার্থে আপনারা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, পাকিস্তানিরা একাত্তরে এদেশে ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করেনি?
তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’। একাত্তর আমাদের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। যারা এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করেন, তারা বাংলাদেশকে অস্বীকার করেন। তাদের বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই।
শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, একাত্তরের ত্রিশ লাখ শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি আমাদের ঋণ আছে। সুতরাং, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলবেন, তাদের প্রতিহত করা আমাদের দায়িত্ব।
মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতির জনককে নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারেন, সেজন্য ‘হলোকাস্ট ডিনায়্যাল আইন' করারও দাবি জানান তিনি।
সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আরাফাত এ রহমান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেত্রী। তাকে দেশের মাটি থেকে উৎখাত করলেই দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা বন্ধ হবে।
খালেদা জিয়াকে ‘মুখোশ পরা পাকিস্তানের নেত্রী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু চট্টগ্রামেই ১১৬টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে হাজার হাজার খুলি উদ্ধার করা হয়েছে। খুলনার চুকনগরে মাত্র এক ঘণ্টায় পনের হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তিনি পাকিস্তান সরকার ও আইএসআইয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বক্তব্য দেন বলে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
আন্দোলনকারীরা খালেদার বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে গুলশান-২ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নেন। কিন্তু কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা স্বার্থে সকাল ১০টার দিকে পুলিশ তাদের বনানী মাঠ সংলগ্ন এলাকায় সরিয়ে নিয়ে আসে। এরপর সেখানে এক প্লাটুন পুলিশ ও জলকামান মোতায়েন করে মঈনুল ইসলাম রোডের সামনের প্রান্তে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। ফলে আন্দোলনকারীরা বেলা এগারোটার দিকে কয়েক দফা চেষ্টা করেও খালেদার বাসভবন অভিমুখে যাত্রা করতে পারেননি। এরপর তারা সেখানেই তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে সংগঠনটির নেতাকর্মী ও শহীদদের সন্তানেরা সরকারের প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ সাত দফা দাবি জানান। সমাবেশ শেষে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তারা।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা, সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের (বীর উত্তম) মেয়ে মেহজাবিন মোশাররফ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুর রাজ্জাকের সন্তান ব্যারিস্টার নাঈম রাজ্জাক এমপি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে ব্যারিস্টার শেখ নাঈম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
এইচআর/ইইউডি/এএসআর