ঢাকা: অহেতুক খরচ না বাড়িয়ে টেকসই, সাশ্রয়ী ও যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৬তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাজধানীর রমনায় আইইবি সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন কাজ পরিকল্পিতভাবে হওয়া প্রয়োজন। পরিকল্পনার সময় খরচ বাড়ানোর কথা ভাববেন না। অহেতুক খরচ না বাড়িয়ে টেকসই, সাশ্রয়ী ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা নিতে হবে।
উদারণ হিসেবে নিজের এলাকার একটি খালের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে এ খাল দেখে আসছি। এখানে জোয়ার-ভাটার পানি আসে যায়। খালের দুই মুখ নদীর সঙ্গে যুক্ত। এই খালের দুই মুখ বন্ধ করে কেন স্লুইচ গেট দিতে হবে।
প্রতিটি উপজেলাকে কেন্দ্র করে উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ফসলী জমি রক্ষার পাশাপাশি ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করার আহ্বান জানান তিনি।
আবাসন করার ক্ষেত্রে জলাশয়, শিশুদের খেলার মাঠ ও খোলা জায়গা রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি ইঞ্চি জমিতে বিল্ডিং করতে হবে কেন?
কাজ অনুযায়ী প্রকল্পের পরিকল্পনার করার নির্দেশ দিয়ে প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারাও তো সেখানে থাকেন বিষয়গুলোর ওপর একটু নজর দেবেন।
সারা দেশে রেল নেটওর্য়াক তৈরির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পায়রা বন্দর, মংলা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করা হবে।
এ সময় প্রকৌশলীদের যেকোনো প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে চাই। আর এই উন্নয়নের চাবিকাঠি প্রকৌশলীদের হাতে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাদের অবদান রয়েছে, আপনাদের ওপর নির্ভর করে উন্নয়ন। আপনাদের ওপর নির্ভর করে একটা প্রকল্প কত দ্রুত শেষ হবে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতি গঠনে প্রকৌশলীদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজস্ব কন্সালট্যান্সির ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, দেশ আমাদের। এদেশের নদী-নালা, খাল-বিল সব আমাদের চেনা। বাইরে থেকে লোক এসে আমাদের সমস্যা কতটুকু বুঝবে?
‘অবহেলিত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আমরা কাজ করছি। দেশের অর্থনীতি গতিশীল ও শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বাংলাদেশ শোষিত ছিল, বঞ্চিত ছিল। আমরা সে স্থান থেকে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছি।
‘দেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশে উন্নীত করা সহজ কথা নয়। আমাদের লক্ষ্য, প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশে উন্নীত করা। নির্ধারিত সময়েই তা অর্জন করবো,’ বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, শূন্যের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন জাতির পিতা। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৫ আগস্টে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বেঁচে থাকলে দেশ অনেক আগেই উন্নত হতো, সমৃদ্ধ হতো।
‘১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। ওই সময় রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট নির্মাণ করেছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৬ সালে আইন করেছিলাম। যমুনা নদীর ওপর প্রথমে রেললাইন প্রকল্প ছিলো না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেখানে রেললাইন, গ্যাস লাইন স্থাপন করেছি। ’
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণ যুগ ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপরের সরকার দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। অবশ্য আমরা যে কাজ শুরু করেছিলাম, অন্যদের সময়ে তার কিছু কিছু শেষ হওয়ায় আমাদের কাজের ফিতা কেটে অন্যরা বাহবা নিয়েছেন।
‘২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে ফের উন্নয়নের কাজ করছি। নিজেদের অর্থায়নেই আমরা পদ্মসেতুর কাজ করে চলেছি। প্রতিটি জেলায় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়, আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রায় ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আনার ব্যবস্থা করেছি। ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য আমরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করেছি। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের কোনো অঞ্চল যেন বঞ্চিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেছি। ’
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বাড়ানোর ওপরও জোর দিতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিটি নদী সচল করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটি নদী ড্রেজিং করতে হবে। এই নদীকে আমরা আমাদের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে পারি।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে পারি। কেউ দেশের বদনাম করুক, আমরা সেটা চাই না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলুন সবাই মিলে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। ২০২১ সালে মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা চাই।
নিজেকে প্রকৌশলী পরিবারের একজন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমিও তো আপনাদেরই একজন। কারণ আমি একজন ইঞ্জিনিয়াররে মা। কাজেই আমার কাছে কোনো দাবি করতে হবে না। প্রয়োজন ও দেশের মানুষের চাহিদা অনুসারে সব পূরণ করবো।
আইইবি সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কবির আহমেদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর বক্তব্য দেন।
এ সময় তারা প্রকৌশলীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রকৌশলী আ আ ম শফিউল্ল্যাহ ও প্রকৌশলী নুরুল হুদাকে আইইবি স্বর্ণ পদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব পদক তুলে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
এমইউএম/এমএ
** আমারও কিছু দাবি আছে, বললেন প্রধানমন্ত্রী
** উন্নত-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়বো