ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জলবায়ু ঝুঁকি

২০-৩০ বছরে সুন্দরী গাছ না থাকার আশঙ্কা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
২০-৩০ বছরে সুন্দরী গাছ না থাকার আশঙ্কা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি ও ক্ষতি মোকাবেলার উদ্যোগ না নিলে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনে কোনো সুন্দরী  গাছ থাকবে না। ওই এলাকার মানুষ নানা শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বেন।



বাংলাদেশ এ ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকার মূল কারণ দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে না পারা ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব।

বৈশ্বিক দরবারে নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি কিংবা সমস্যা সঠিকভাবে উপস্থাপন না করার কারণেও দুর্যোগ ও জলবায়ু পরির্তনের ফলে ভবিষ্যতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ।

শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ওয়ারশ্ আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বিষয়ক কর্মশালা’ -এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জলবায়ু ও দুর্যোগ বিষয়ে কর্মরত গবেষক, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা।

অ্যাকশন এইডের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব উত্থাপনের উদ্দেশ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, এনএসিওএম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ দু’দিনের এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরে বিশ্বের ৫০ উন্নয়নশীল দেশ জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তনের ক্ষতি নিরুপণ করে বৈশ্বিকভাবে দাবি তুলে ধরা হবে। সেই সম্মেলনে বাংলাদেশ যদি সঠিকভাবে দাবি তুলে ধরতে না পারে, তাবে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ নিত্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এ সমস্যার সমাধান তাই অতীব জরুরি। প্রয়োজন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস তহবিল গঠনের। ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসের সকল আলোচনা এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় দর কষাকষিতে ক্ষয় ও ক্ষতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। আবার এ বছরই ‘ক্ষয় ও ক্ষতি’ বিষয়ক ওর্য়াশ আন্তর্জাতিক দলিলের কর্ম পরিকল্পনার ওপর দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। যার ভিত্তিতে এ দলিলটিকে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে  পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবেলায় যদি সঠিকভাবে কাজ না করা হয়, তবে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনে কোনো সুন্দরী  গাছ থাকবে না। এখনই ওই এলাকার মানুষকে লবণাক্ততার কারণে পানি কিনে খেতে হয়। যে কারণে যতোটুকু ভালো পানি তাদের পান করা দরকার, সেটি তারা পারছেন না। এ রকম চলতে থাকলে তারা কিডনি সমস্যাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় পড়বেন’।

তিনি আরো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সেটি এখনো নিরুপিত হচ্ছে না। নেই সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ। মানুষের আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের একটা দাবি ছিল, দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা। ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের, এতো বছর পরও আমরা আমাদের ক্ষতির মাত্রা নিরুপণ করতে পারিনি। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে এটা করা খুবই জরুরি।

দুর্যোগ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. সালিমুল হক বলেন, ডিসেম্বরে মরক্কোতে অনুষ্ঠেয় বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির দাবি তুলে ধরতে হবে। যতোটুকু সময় আছে তার মধ্যেই আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। সেখানে আমাদের প্রস্তাব উত্থাপন করতে হলে ব্যাপক প্রস্তুতির প্রয়োজন। ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ীরা কেন ক্ষতিপূরণ দেবে তার জন্য যুক্তি উপস্থাপন করার জরুরি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান সন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ কামাল বলেন,  আমরা নিজেরা সংগঠিত না। দুর্যোগের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে তার দায় আমাদের না। এজন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। তাদের কাছে আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। আর সেটি শক্তভাবে করতে হলে আমাদের ক্ষয় ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। আমরা সেটি করতে পারছি না। জলবায়ু বা দুর্যোগ ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারছি না। এর মূল কারণ আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি না। স্বাধীনতার ৪৫ বছর হলো। কিন্তু দুর্যোগ ও জলবায়ু ইস্যুতে আমরা শক্ত অবস্থানে যেতে পারিনি।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, জলবায়ু ও দুর্যোগ নিয়ে সবার মধ্যে পরিষ্কার ও শক্ত ধারণা তৈরি করতে হবে। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে। সেটি না করতে পারলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শারীরিকভাবে আরো বেশি সমস্যায় পড়বেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ফলে শুধুমাত্রা আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতিই হচ্ছে না। একজন মানুষের মানসিক, শারীরিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতিও হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা উচিৎ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫
জেপি/এএসআর

** জলবায়ু সম্মেলন থেকে এবার খালি হাতে নয়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।