ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকির মুখে সুন্দরবনের সুন্দরি গাছ। ঝুঁকি ও ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলার উদ্যোগ না নিলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনে কোনো সুন্দরি গাছ থাকবে না।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ওয়ারশ্ আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বিষয়ক কর্মশালা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জলবায়ু ও দুর্যোগ গবেষক, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা এ মত দেন।
কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব উত্থাপনের উদ্দেশ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, এনএসিওএম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও একশনএইড বাংলাদেশ দু’দিনের এই কর্মশালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, এ বছের ডিসেম্বরে বিশ্বের ৫০ উন্নয়নশীল দেশের জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তনের ক্ষতি নিরূপণ করে বৈশ্বিকভাবে দাবি তুলে ধরা হবে। সেই সম্মেলনে বাংলাদেশ যদি সঠিকভাবে দাবি তুলে ধরতে না পারে, তবে আন্তর্জাতিভাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ ও জলবাযু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবেলায় যদি সঠিকভাবে কাজ না করা হয়, তবে আগামী ২০/৩০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনে কোনো সুন্দরি গাছ থাকবে না। এখনই ওই এলাকার মানুষকে লবণাক্ততার কারণে পানি কিনে খেতে হয়। যে কারণে যতটুকু ভালো পানি তাদের পান করা দরকার, সেটি তারা পাচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে, তারা কিডনি সমস্যাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় পড়বেন।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের যে ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে সেটি এখনও নিরূপিত হচ্ছে না। নেই সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ। মানুষের আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের দাবি ছিল, দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের, এত বছর পরও আমরা আমাদের ক্ষতির মাত্রা নিরূপণ করতে পারিনি। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে এটা করা খুবই জরুরি।
দুর্যোগ ও জলবাযু বিশেষজ্ঞ ড. সালিমুল হক বলেন, ডিসেম্বরে মরোক্কতে অনুষ্ঠেয় বৈশ্বিক জলবায়ূ সম্মেলনে আমাদের ক্ষয়-ক্ষতির দাবি তুলে ধরতে হবে। যতটুকু সময় আছে এর মধ্যেই আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ নিত্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এ সমস্যার সমাধান তাই অতীব জরুরি। প্রয়োজন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস তহবিল গঠনের। ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের সব আলোচনা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় দর কষাকষিতে ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এই বছরই ‘ক্ষয় ও ক্ষতি’ বিষয়ক ওয়ারশ্ আন্তর্জাতিক দলিলের কর্ম পরিকল্পনার ওপর দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। যার ভিত্তিতে এই দলিলটিকে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ কামাল বলেন, আমরা নিজেরা সংগঠিত না। দুর্যোগের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে তার দায় আমাদের না। এজন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। তাদের কাছে আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। আর সেটি শক্তভাবে করতে হলে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে।
একশনইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সবার মধ্যে পরিষ্কার ও শক্ত ধারণা তৈরি করতে হবে। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ফলে শুধুমাত্রা আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে না। একজন মানুষের মানসিক, শারীরিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
এসএমএ/এমজেএফ