ঢাকা: রাজধানীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করতে মাস দুয়েক ধরে চলছে উচ্ছেদ অভিযান। কিন্তু সকালে অভিযান চললেও বিকেলেই দখল হয়ে যাচ্ছে সেই ফুটপাত।
সম্প্রতি কয়েকটি উচ্ছেদ অভিযানের পর ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, অভিযানকালে ফুটপাত পুরোপুরি হকারশূন্য হয়ে গেলেও ঘণ্টা কয়েক পরই সে ফুটপাত পুনর্দখল হয়ে পড়েছে। আগের মতোই ফুটপাতের হাঁটাচলার জায়গা চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে।
দফায় দফায় অভিযানের পর পুনর্দখল হয়ে গেছে এমন তালিকায় আছে রাজধানীর গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বায়তুল মোকাররম, জিপিও মোড়, ক্রীড়াভবন, দৈনিক বাংলা, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, দিলকুশা, মতিঝিল, ফকিরাপুল, টিকাটুলি, সদরঘাট, বঙ্গবাজার, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজ, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড়, শাহবাগ, মালিবাগ-মৌচাক, ফার্মগেট, বাড্ডা, রামপুরা, শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যস্ততম ফুটপাত।
সংশ্লিষ্ট ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে থেকে সাতবার ও গুলিস্তান থেকে ছয়বার ফুটপাত ও সড়ক থেকে হকার এবং অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছে। কেবল অভিযান নয়, অবৈধভাবে জায়গা দখলের কারণে জরিমানাও করা হয় কিছু দোকানিকে। ফুটপাতকে দখলমুক্ত করতে খোদ মেয়র হকার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনোভাবেই সমাধান আসছে না।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, ফুটপাতে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালানোর মতো তেমন কোনো লোকবল নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি)। যে কারণে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানোর পর ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত নজরদারি রাখতে পারছে না তারা। এরওপর ফুটপাত পুনর্দখলে পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতার সহায়তা পাচ্ছে হকাররা।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, অভিযানের কিছুক্ষণ পরই ফুটপাতে আবারও হকারদের বসিয়ে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতারা। এর বিনিময়ে প্রতিদিন হকারদের কাছ থেকে তারা তুলে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকার চাঁদা। সেই চাঁদার ভাগ যাচ্ছে পুলিশের অসাধু ওই কর্মকর্তাদের পকেটে।
আলাপ করলে এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লান মার্কেটের সামনের ফুটপাতে বসা দোকানি জাহেনুর বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো বসার সাহস পাইতাম না। যদি আমাগো ‘বড় ভাইয়েরা’ সুযোগ কইরা না দিতো।
তবে কারা এই ‘বড় ভাই’ তা জানাতে চাননি হকার জাহেনুর।
গুলিস্তানের হকার আসলাম জানান, তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল কিছুদিন আগে। তবে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা আবারও তাদের বসিয়ে দিয়েছেন। বিনিময়ে ওই নেতারা লোক পাঠিয়ে প্রতিদিন প্রত্যেক দোকান থেকে পঞ্চাশ থেকে সত্তর টাকা করে চাঁদা তুলে নিয়ে যান।
শাপলা চত্বর এলাকার ফুটপাতের হকার রাসেল আহমেদ খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, সবাই তো আমাগো উঠায় দিতেই চায়। কিন্তু যারা আমাগো কাছ থাইক্যা টেকা নেয়, তাদের তো কিছু করবার পারে না।
অবশ্য হকারদের পুনর্বাসন করা যাচ্ছে না বলেও ফুটপাত পুনর্দখল হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। তাদের বক্তব্য, উচ্ছেদ অভিযানে নামার আগে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য তালিকা করা হয়। কেবল গুলিস্তানেরই প্রায় দুই হাজার হকারকে পুনর্বাসনের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু সে তালিকা ‘তালিকা’ই থেকে গেছে।
এসব বিষয়ে আলাপ করলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালিদ আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ ও স্থানীয় নেতারা ফুটপাত দখলে হকারদের সহায়তা করছেন বলে অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। আবার অভিযান চালানোর পর পুলিশকে ওই জায়গাগুলো নজরজারিতে রাখতে বললেও তা মানা হয় না।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক অনেকবার সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
খালিদ আহম্মেদ বলেন, প্রয়োজন দেখলেই আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি। এজন্য স্থানীয় কাউন্সিলর ও নেতাদেরও সহায়তা পাওয়া যায়। কিন্তু পুলিশ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করলে এ উদ্যোগ কখনও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
এসব বিষয়ে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ফুটপাত পুরোপুরি দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলতে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
এমআইকে/এইচএ