ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তন এবং সারসহ অন্যান্য কীটনাশক ব্যবহারের সময় সচেতন না থাকায় কৃষকরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ এবং সেবা প্রদান করার এখনই সময়।
রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘জলবায়ু সহিষ্ণু প্রযুক্তি: সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বীজ শাখার মহাপরিচালক আনোয়ার ফারুক বলেন, কৃষককে আমরা এখনো মূল্যায়ন করিনা। আমরা শুধু কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদন ভোগ করি। কিন্তু তাদের কোনো খোঁজ রাখি না।
তিনি বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের নতুন নতুন উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা এখনো কৃষি বলতে শুধু ধানকেই বুঝি, এটা বদলাতে হবে। শুধু ধান নয়, সবজিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চ্যানেল আই’র পরিচালক ও হেড অব নিউজ শাইখ সিরাজ বলেন, কৃষকরা সার ছিটানোর সময় তাদের মুখও ঢেকে রাখেন না। তাদের কাছে এ তথ্যটি পৌঁছাতে হবে। যারা বীজ বিক্রি করছেন তারাই এ কাজটি করতে পারেন।
তিনি বলেন, কৃষকদের পেশাগত ঝুঁকি বাড়ছে। সচেতনতার অভাবে চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে। এতোদিন এসব বিষয়ে নজর দেওয়া হয়নি, কারণ আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত ছিলাম। এখন কৃষকের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দিতে হবে। কারণ তাদের উৎপাদিত খাদ্য খেয়েই আমরা কাজ করি।
শাইখ সিরাজ বলেন, এখন উত্তরাঞ্চলের জমিতে ধানের বদলে আম, লিচুর বাগান উঠছে, দক্ষিণাঞ্চলে মাল্টার বাগান উঠছে। অথচ আমাদের কর্মকর্তারা কৃষি মানে শুধুই ধান বোঝেন। কৃষকদের সঙ্গে নতুন নতুন ধারণা কর্মকর্তাদেরও নিতে হবে।
ব্র্যাকের কমিউনিকেশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্টের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (পরিকল্পনা) আসিফ সালেহর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের কৃষিখাতকে সম্ভাব্য যেসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে তা ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশে এখন আর আগের মতো ষড়ঋতুর বৈশিষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের পর গ্রীষ্ম আসলেও বসন্ত যেন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। হেমন্তের উপস্থিতিও সেভাবে বোঝা যায় না। আবার বর্ষা আসছে নির্ধারিত সময়ের অনেকটা পরে।
জলবায়ুর ক্রম পরিবর্তনের সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমন উৎপাদনের ওপর। যার ফলে কৃষকরাই সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ধানের জাত উদ্ভাবনের দিকে মনেযোগ না দিলে কৃষকরা ধান উৎপাদন থেকে সরে এসে সবজির দিকে মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকে পড়বেন। এতে ধান উৎপাদন কমে গিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
অধ্যাপক আইনুন নিশাত আরো বলেন, দেশে খরার প্রভাব আগের চেয়ে বেড়েছে। গবেষণার মাঠকর্মের স্থান হিসেবে নওগাঁর চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে ও উত্তরাঞ্চলের বিশেষ কিছু জায়গায় এখন ধানের মৌসুমে কৃষকরা ধান না করে সেই খেতে আমের ফলনে যাচ্ছেন। গবেষণার পর্যবেক্ষণে বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ৬০ শতাংশ এলাকায় সেচের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের প্রধান ড. সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
এমএন/জেডএস