ঢাকা: টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বৈধ নয় বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে কাদের সিদ্দিকীর করা আবেদন দুই সপ্তাহের জন্য স্ট্যান্ডওভার করা হয়েছে।
রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী।
তিনি জানান, আদালত আবেদনটি দুই সপ্তাহের জন্য স্ট্যান্ডওভার রেখেছেন। এর মধ্যে নিয়মিত আপিল করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ইসি কোনো ধরনের কার্যক্রম করতে পারবে না।
তবে ইসি’র আইনজীবীরা জানিয়েছেন, চেম্বার আদালত তাদের আবেদনে সাড়া দেননি। তাই হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।
কাদের সিদ্দিকীর করা রিট খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ নয় বলে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল রেখে রায় দেন।
এরপর হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী।
হাইকোর্টের রায়ের পরে ড. ইয়াসিন পরে জানান, হাইকোর্ট কাদের সিদ্দিকীর রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। এখন আর তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী নির্বাচন হবে।
অন্যদিকে ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী জানান, কাদের সিদ্দিকীর ঋণখেলাপির বিষয়ে হাইকোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। হাইকোর্ট বলেছেন, নির্বাচন পরবর্তী যে ট্রাইব্যুনাল হয়, সেখানে কাদের সিদ্দিকী আবেদন করতে পারতেন।
টাঙ্গাইল-৪ আসনে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী। গত বছরের ০১ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ০৩ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়।
এরপর গত বছরের ১০ নভেম্বর টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপ-নির্বাচনের দিন ধার্য করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
অন্য দলের পাশাপাশি এতে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
কিন্তু ঋণখেলাপের অভিযোগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর ১৬ অক্টোবর এ দুই নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল আবেদন করেন।
১৮ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন কাদের সিদ্দিকীর আপিল খারিজ করে তার মনোনয়নপত্র বাতিলের চূড়ান্ত রায় দেন।
এরপর নির্বাচন কমিশনের বাতিল আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কাদের সিদ্দিকী।
এ রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২১ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের আদেশ স্থগিত ও কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে আদেশ দেন বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আদেশের বিষয়ে রুল জারি এবং রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনের আদেশ স্থগিত করেন আদালত।
পরে ২৬ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন জানান ইসির অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড ব্যারিস্টার ড. মো. ইয়াসিন খান।
পরদিন ২৭ অক্টোবর আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনই স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে ইসি’র আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়ে ০২ নভেম্বর এর শুনানির দিন ধার্য করে দেন।
০২ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতির দেওয়া উপ-নির্বাচনের ওই স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত উপ-নির্বাচন স্থগিত রেখে এর মধ্যে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চে নিষ্পত্তির আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৪ সালেও টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর) আসনের উপ-নির্বাচনেও প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। সে সময়ও ঋণখেলাপের অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
** হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে কাদের সিদ্দিকীর আবেদন
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
ইএস/এএসআর