ঢাকা: মানবপাচারকারী সনি আহম্মেদ ওরফে ওলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলানিউজকে বিষয়টি জানান পিবিআই'র ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের প্রধান এসএসপি (বিশেষ পুলিশ সুপার) আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, সনি একজন কুখ্যাত মানবপাচারকারী। শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দিনগত গভীর রাতে রাজধানীর শান্তিনগর ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই'র ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের প্রধান এসএসপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, পল্টন থানায় ২০১৫ সালের জুলাইয়ের ১০ তারিখে দায়ের করা মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন মামলার প্রধান আসামি সনি। সে এতোদিন পলাতক ছিলো।
তিনি বলেন, জার্মানি পাঠানোর নাম করে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দির বাসিন্দা মোহাম্মদ সবুজ এবং মহিউদ্দিন নামের দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেয় সনি।
পিবিআই'র কাছে সনি স্বীকারোক্তি দিয়েছে- একই বছরের এপ্রিলের ৪ তারিখে ওই দু’জনসহ সুমন নামের আরো একজনকে জার্মানি পাঠাবে বলে সনি আহাম্মেদ ও তার ভাগ্নে শফি তাদেরকে ভারতের ভিসা করিয়ে বেনাপোল হয়ে কলকাতা নিয়ে যায়।
পরে তাদের নয়াদিল্লি নিয়ে একটি হোটেলে ১০ দিন রাখে। সনি আহাম্মেদ তাদেরকে নয়াদিল্লি থেকে ভিসা করিয়ে জার্মানিতে পাঠাবে বলেছিল।
পরে সমস্যা হচ্ছে বলে তাদের জানায় এবং তার ভাগ্নে শফির সঙ্গে সবাইকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে নিজে একা রওনা হয়ে যায়। শফি তাদের ৩ জনকে নিয়ে কলকাতার বনগাঁয়ে এসে এক হোটেলে ওঠে।
৩ থেকে ৪ দিন পরে সবুজ ও মহিউদ্দিনকে নিয়ে ভাগ্নে শফি বেনাপোল হয়ে প্রথমে যশোরের মনিহার এবং পরে বাসযোগে ফরিদপুরে এসে ওঠে।
সেখান থেকে পাচারকারী সনি আহাম্মেদ ওরফ ওলী তাদের দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে বাসযোগে কক্সবাজার যায়, সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কক্সবাজারের এক দুর্গম জায়গায় নিয়ে এক চালা ঘরে আটকে রাখে।
এ সময় তাদেরকে ট্রলারযোগে থাইল্যান্ড নিয়ে সেখানে ভিসা করিয়ে জার্মানি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। কিন্তু একমাস পার হয়ে গেলে তারা এই নিয়ে সনি আহাম্মেদকে বারবার তাগিদ দিতে থাকলে এক পর্যায়ে তাদেরকে ফেলে সনি আহাম্মেদ কেটে পড়ে।
বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজেরা পরামর্শ করে দু’জন কোনোরকমে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় কুমিল্লাগামী বাসে ওঠে। পরে দাউদকান্দি নিজ গ্রামে ফিরে বিষয়টি তাদের পরিবারের সবাইকে জানায়।
পরে পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে গোপালগঞ্জের মুকসেদপুরে ওলীদের বাড়িতে গিয়ে তারা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এতে ওলী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়।
অবশেষে এ বিষয়ে ভূক্তভোগী মো. সবুজ বাদী হয়ে সনি আহম্মেদ ওলী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
এসএসপি বলেন, মামলায় থানা থেকে প্রেরিত পুলিশ রিপোর্টের বিষয়ে বাদী সবুজ নারাজী দিলে আদালত বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই ঢাকায় প্রেরণ করে।
এ অপরাধে জড়িত অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এসএসপি আবুল কালাম আজাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৫
এনএইচএফ/জেডএস