জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: এক এগারোর (১/১১) সময় ‘মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়ে সংবাদ’ প্রকাশের অভিযোগে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।
রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) মাগরিবের নামাজের বিরতির পর সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তিনি।
ফজলে নূর তাপস বলেন, পত্রিকাটির কার্যক্রম আর্টিকেল-৭ অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল। পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার পেশায় থাকার অধিকার নেই’। তাকে সাংবাদিকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও দাবি জানান ফজলে নূর।
এরপর এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, জয়পুরহাট-২ আসনের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল, ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও সংরক্ষিত সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম।
ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বলেন, সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভে পৌঁছে গেছে। কিন্তু সেই সময় একজন সম্পাদক কীভাবে সাংবাদিকতাকে কলঙ্কিত করেছেন? এ ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘মাহফুজ আনাম মিথ্যার বেসাতি দিয়ে ঢালাও খবর ছেপেছেন। মাহফুজ আনাম পেপার ট্রায়াল করেছেন। তিনি (মাহফুজ আনাম) স্বীকার করেছেন, তাকে তো ‘থুক্কু’ দিয়ে মাফ করা যায় না। ’
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘মাহফুজ আনাম জাতির সামনে স্বীকার করলেন, তিনি তার পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছেন। তাই তার বিচার হওয়া উচিত’।
তিনি বলেন, ‘তারা প্রায়শই আমাদের ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের খুব আকাঙ্খা তাদের গাড়িতে পতাকা লাগবে। কিন্তু জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ এ সমস্ত ব্যক্তিদের পছন্দ করে না। যদি গাড়িতে পতাকা লাগাতে হয়, তাহলে রাজনীতিবিদ হন, মানুষের কাছে যান, সুইপারের সঙ্গে কোলাকুলি করেন, শ্রমিকের শরীরের ঘাম নিজের শরীরে লাগান, শেখ হাসিনার মতো দেশের প্রত্যেকটি এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তা না করে, এসি রুমে বসে, এসি গাড়িতে চড়ে ওই মিডিয়ার সুযোগ নিয়ে বড় বড় ছবক দেবেন রাতে-দিনে সব সময়। রাজনীতিবিদদের বোকা বানাবার চেষ্টা করবেন, চরিত্রহননের চেষ্টা করবেন’।
স্বপন আরো বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে এসে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলুন। মানুষ যদি গ্রহণ করেন, তাহলে সফল হবেন। কিন্তু আমরা জানি মানুষের সঙ্গে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই’।
‘ষড়যন্ত্র করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করতে চান?’ বলে প্রশ্ন উত্থাপন করে বাদল বলেন, ‘এই পরিকল্পিত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং কাঠগড়ায় তাদের সমুচিত বিচার করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন’।
ইংরেজি পত্রিকাটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রশ্নের মুখে মাহফুজ আনাম তার দোষ স্বীকার করেন।
সেদিন মাহফুজ আনাম বলেছেন, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর’ যাচাই ছাড়া প্রকাশ করে সাংবাদিকতা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটা আমার সাংবাদিকতার জীবনে সম্পাদক হিসেবে ভুল, এটা একটা বিরাট ভুল। সেটা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি’।
হাজী সেলিম বলেন, ‘ওই সময় ভুক্তভোগী শুধু তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই না, আমিও একজন। খাই নাই, দাই নাই, গ্লাস ভাঙার মামলা খাইলাম’।
তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের কিছু মানুষ আলবদর, রাজকার, আলশামস গঠন করে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করেছিলেন। তাই আমার মনে হয়, এরাও ওয়ান ইলেভেন সরকারকে সহযোগিতা করেছিলেন। এজন্যই তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত’।
নূরজাহান বেগম বলেন, ‘তিনি (মাহফুজ আনাম) প্রায়ই রাজনীতিবিদদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু তিনি যে কাজটি করেছেন তা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং এই অনৈতিক কাজ করার জন্য সাংবাদিকতায় থাকারও অধিকার তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। যেহেতু তিনি নিজ মুখে স্বীকার করেছেন। তাই এখান থেকে পেছনে ফেরার কোনো কারণ নেই। তাই তার বিচার দাবি করছি’।
তবে তাদের দাবির বিপক্ষে মত দিয়ে বক্তব্য রাখেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী
তিনি বলেন, ‘এ সংসদে অনেকে সদর্পে বসে আছেন। সেদিন তারা অনেকেই বিবেককে জলাঞ্জলি দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন। এখন শুধু মাহফুজ আনামের একটি সরল স্বাকারোক্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেক মাহফুজ আনামই এই সংসদে বহাল তবিয়তে আছেন। কথা বলতে গেলে অনেকের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে’।
এ সময় সংসদে সভাপতির চেয়ারে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬/আপডেট: ২০১৫, ২২২০ ঘণ্টা
এসএম/টিআই/এএসআর