ঢাকা সামিট থেকে: তিনতলার দালান বাড়ি। ছাদের কয়েকটা অংশ গোল করে কাটা।
এমনই একটি বাড়ির নকশা তুলে ধরা হয়েছে রাজধানীর শিল্পকলায় চলা চার দিনব্যাপী ঢাকা আর্ট সামিটের প্রদর্শনীতে। আর এমন দৃষ্টিনন্দন বাড়ির নকশাটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের রফিক আযম। তবে বাস্তবেও কিন্তু এমন বাড়ির দেখা মিলবে। গাজীপুরে গেলেই চোখে পড়বে এটি, যা ‘ভুঁইয়া বাড়ি’ নামে পরিচিত।
শুধু গাজীপুর নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত সুন্দর সুন্দর আরও বেশ কয়েকটি বাড়ির নকশা স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। যার সবগুলোরই নকশা করেছেন বাংলাদেশের স্থাপতিরা।
দেশের ১৩ জন বিশিষ্ট স্থাপতির করা হাতের নকশা (ড্রয়িং) স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এরা হলেন, রফিক আযম, জালাল আহমেদ, সালাউদ্দিন আহমেদ, সাইফুল হক, নেহাস আহমেদ খলিল, রাজিউল আহসান, মাজহারুল ইসলাম, বশিরুল হক, মেরিনা তাবাসসুম, তানিয়া করিম ও এম.আর.খান, স্টেফেন পাওমিয়ার, ইহসান খান, এনামুল করিম নির্ঝর ও শামসুল ওয়ারেস। এ কারণে এই গ্যালারির নাম দেয়া হয়েছে ‘আর্কিটেকচার অফ বাংলাদেশ’।
প্রদর্শনীর প্রতিটা নকশাই নজর কেড়েছে আগত দর্শণার্থীদের। ভবন ও বাড়ির নকশা থাকবে শুনে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী, নাট্য ও টিভি ব্যক্তিত্ব, মনোরম বাড়ি করতে ইচ্ছুক সৌখিন মানুষ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিদ্যার শিক্ষার্থীরা।
আগত দর্শণার্থীরা যাতে এসব স্থপতিদের সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তাদের তৈরিকৃত আরও নকশা দেখতে পারেন, সেজন্য গ্যালারির বিভিন্ন কর্ণারে বসানো হয়েছে পাঁচটি এলসিডি মনিটর। সেখানে কাজসহ স্থপতিদের ছবি ভেসে উঠছে। কোন নকশাটি কোন চিন্তাকে সামনে রেখে করেছেন, তাও জানিয়ে দিচ্ছেন তারা।
প্রতিটি নকশাই আগতরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনে ছবিও তুলে নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ তো দৃষ্টিনন্দন নকশার সঙ্গে সেলফিও তুলছেন।
আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিদ্যার শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, আগে হাতে কোনো নকশা তৈরি করতে সময় লাগতো দুই থেকে তিন মাস। যা খুবই কষ্টের ছিল। এখন তো কম্পিউটারেই তা করা যায়। কিন্তু আগের কাজগুলো যে কতটা মনের মাধুরী মিশিয়ে করা হতো, দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে।
মারজুক সালভী জানালেন, গাছ-গাছালী, পুকুর, নৌকা ও ঘাটকে তুলে ধরা বাড়িটি তার মন কেড়েছে। সব মিলে একটা আধুনিক রূপ দেওয়া হয়েছে নকশায়।
তিনি আরও বলেন, একজন স্থপতির কাজই হলো সবার জন্য চিন্তা করা। তিনি কাউকে অবহেলা করবেন না। প্রদর্শনীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য করা মাজহারুল ইসলাম স্যারের একটি নকশা রয়েছে।
মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশের স্থাপতিদের মধ্যে অন্যতম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট ও ন্যাশনাল আর্কাইভ ভবনের নকশা তৈরি করেছেন তিনি।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ফাত্তাহ মো. নুরুল হুদা বলেন, বাড়ি করলে তো ভাল নকশা লাগবে। বাংলাদেশে কোন কোন ধরনের নকশা প্রচলিত, সেটা দেখতেই আসা। তবে নিখুঁতভাবে হাতে তৈরি এসব নকশা দেখে অবাক হচ্ছি।
১৩ জন স্থপতির একজন এম. আর খান বাংলানিউজকে বলেন, আগে হাতে তৈরি ড্রয়িং (নকশা) যে কতটা চিন্তা আর মনন দিয়ে করা হতো, প্রদর্শনী ঘুরে তার পার্থক্য বুঝবেন নতুন প্রজন্মের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীরা। মূলত আগের এবং এখনকার নকশার যে পার্থক্য, তা তুলে ধরতেই আমরা এসব প্রদর্শন করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘন্টা,ফেব্রুয়ারি ০৭,২ ০১৬
এমআইকে/আরএইচ