ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইব্রাহীমের আত্মজীবনী গ্রন্থ একটি আত্মসামাজিক ইতিহাসের দলিল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
ইব্রাহীমের আত্মজীবনী গ্রন্থ একটি আত্মসামাজিক ইতিহাসের দলিল অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

ঢাকা: গত পঁচিশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া দুঃখজনক, হতাশার বলে মন্তব্য করেছেন লেখক-গবেষক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি একে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের বহির্প্রকাশ বলেও মন্তব্য করেন।


 
বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক-সম্পাদক ও সেন্টার ফর ম্যাস এডুকেশন ইন সায়েন্সের (সিএমইএস) প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর মুহাম্মদ ইব্রাহীমের আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘জীবনস্মৃতিতে মানুষ-দেশ-বিজ্ঞান’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
 
সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর আহমদ কবীর।
 
অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইব্রাহীম এবং ইব্রাহীমের মতো অনেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। একইসঙ্গে বিজ্ঞান আন্দোলন করেছেন, লিখেছেন, পত্রিকাও বের করেছেন। ছাত্র জীবনের এই বহুমুখী জ্ঞানের চর্চা কিংবা কর্মকাণ্ড সামাজিক ইতিহাসকে যেমন বিকশিত করেছে তেমনি জ্ঞান চর্চার পরিধিকেও বিস্তৃত করেছে।  
 
বাংলাদেশের ইতিহাস চর্চা পক্ষপাতদুষ্ট উল্লেখ করে অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, আমাদের এখানে আজ ইতিহাস চর্চা হচ্ছে না। এখানে যারা ইতিহাসবিদ তারা বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী। নিরাসক্ত হয়ে তারা ইতিহাস চর্চা করতে পারছেন না, লিখতে পারছেন না। ইব্রাহীমের এই আত্মজীবনী একটি নিরাসক্ত আত্মসামাজিক ইতিহাস।
 
‘জীবনস্মৃতিতে মানুষ-দেশ-বিজ্ঞান’ গ্রন্থটিতে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনের নানা ঘটনা, মূল্যায়ন সংশ্লেষণ করে এ আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
 
তিনি বলেন, আর এতেই প্রমাণ করে, প্রফেসর মুহাম্মদ ইব্রাহীম একজন বিজ্ঞান লেখক, তিনি একজন বিজ্ঞানী।
 
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক লেখক, চিন্তক ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আত্মজীবনী লেখেন সংগ্রামীরাই। আত্মজীবনী একটি যুগের ইতিহাস, সময়ের ইতিহাস। সময়, যুগ চলে যাবে, আত্মজীবনী এই গ্রন্থটি থেকে যাবে। তবে পাঠ সুবিধা বিবেচনায় গ্রন্থটি কয়েক খণ্ডে হলে ভালো হতো।  
 
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, একজন নতুন মানুষকে আমি আবিষ্কার করেছি এই গ্রন্থটিতে। যে মানুষটিকে সব সময় দেখার পরও অনেক কিছু অচেনা-অদেখা রয়ে যায়। প্রাঞ্জল, সহজ-সুন্দর ভাষা তার এই আত্মজীবনীকে সমৃদ্ধ করেছে।
 
তিনি বলেন, আত্মজীবনী সব সময়ই একটি ইমোশনাল গ্রন্থ। ব্যক্তির জীবন-সংগ্রাম, উত্থান-পতন সবকিছু আত্মজীবনীতে থাকবে। তবে ঐতিহাসিক বিষয় আত্মজীবনীতে না থাকাটাই শ্রেয়। হলেও সেটা কয়েক খণ্ডে হতে পারে। খুঁটিনাটি অসংখ্য বিষয় সব সময় আত্মজীবনীতে থাকবে, তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
 
আলোচনা অনুষ্ঠানে আত্মজীবনী গ্রন্থের লেখক মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, যা কিছু বলার তা আমি বইতে বলে ফেলেছি। এ বইটি কতোজনে পড়বে, তা জানি না। কিন্তু এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুরনো বন্ধু-বান্ধব যারা সমবেত হয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত। আসলে আমি আনন্দের সঙ্গে বইটি লিখেছি। কোনো গুঢ় সামাজিক ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে বইটি আমি লিখিনি। এমনকি বিখ্যাত হওয়ার জন্যও না।  
 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. শামসুল হোসাইন বলেন, আত্মজীবনীতে সাধারণত ব্যক্তি বা লেখকের জীবনের গল্প থাকে। কিন্তু ইব্রাহীমের এই আত্মজীবনীটি ব্যতিক্রম। এ আত্মজীবনীতে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ-প্রতিবেশের পরিবর্তন-বিবর্তনের ধারা উঠে এসেছে।  
 
আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার গতি-প্রকৃতি, পরিবর্তন জীবন-জীবিকার সঙ্গে কতোটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা ড. ইব্রাহীমের এ আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে। শিক্ষক-অভিভাবকদের এ আত্মজীবনী গ্রন্থটি পড়া উচিৎ।
 
তিনি বলেন, শিশুর জগৎকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে আমাদের দাদা-দাদী, ফুপু-খালা, চাচা-মামাদের একটি বিশেষ ভূমিকা থাকে। শুধু তাই না, পাড়া-প্রতিবেশিদেরও ভূমিকা থাকে। কিন্তু দিন দিন আমরা তা হারিয়ে ফেলছি। ইব্রাহীমের এই বইটি পড়লেই বোঝা যাবে, আজকে কতোটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেড়ে উঠছে আমাদের শিশুরা।   
 
এ আত্মজীবনী গ্রন্থটি নিরেট আত্মকথা না। এটি একটি সামাজিক ইতিহাসের দলিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ভূঁইয়া ইকবাল, নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. মাহমুদুল আলম প্রমুখ।
 
আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে অতিথিরা বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। দুই খণ্ডে ‘জীবনস্মৃতিতে মানুষ-দেশ-বিজ্ঞান’ বইটি প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
এমএইচপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।