ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগের বেঞ্চ পুর্নগঠন করা হয়েছে। এ বেঞ্চে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিল মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এসেছে।
মঙ্গলবারের (০৯ ফেব্রুয়ারি) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় দেখা যায়, মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানির জন্য ৬ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। আর ১ নম্বর এ বেঞ্চের বিচারপতি হিসেবে নাম রয়েছে মোট পাঁচজনের। তারা হলেন- প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
এর আগে এ বেঞ্চে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মামলা শুনতেন প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৪ সালের ০২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মীর কাসেম আলী আপিল করেন। মীর কাসেম তার দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন।
এ আপিল মামলার সারসংক্ষেপ আগেই দাখিল করেছেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ।
গত ০৬ জানুয়ারি শুনানির দিন ০২ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ। আর ০২ ফেব্রুয়ারি আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি পিছিয়ে ০৯ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ আদালত।
ট্রাইব্যুনালে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম আলী। এ ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। বাকি ৪টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি।
১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অর্থাৎ ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ৪টি অর্থাৎ ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়।
১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ মোট ৮ জনকে হত্যার দায়ে কাসেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে ও ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ১১ নম্বর অভিযোগে সর্বসম্মত ও ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ফাঁসির রায় দেন বিচারপতিরা।
ফাঁসি ছাড়াও প্রমাণিত অন্য ৮টি অভিযোগে আরও ৭২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পান চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাসেম আলী। এর মধ্যে প্রমাণিত ফারুককে অপহরণ-নির্যাতনে (২ নম্বর অভিযোগ) ২০ বছর ও নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতনের (১৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড পান তিনি। এছাড়া অপহরণ, আটক ও নির্যাতন সংক্রান্ত ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
প্রমাণিত না হওয়া ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগে খালাস পান মীর কাসেম আলী। এগুলো ছিল অপহরণ, আটক ও নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ।
মীর কাসেম আলীর মামলাটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি করা হবে ৭ম আপিল মামলার।
এর আগে ঘোষিত ছয়টি আপিল মামলার চূড়ান্ত রায়ের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত চারজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাকি দু’টির মধ্যে একটির পূর্ণাঙ্গ ও একটির সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।
চূড়ান্ত রায়ের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর গত বছরের ১১ এপ্রিল জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ২১ নভেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি বহাল রেখে ৬ষ্ঠ আপিল মামলার রায় দেওয়া হয়েছে গত ০৬ জানুয়ারি।
অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ সাজা পুনর্বহালের আরজিতে রাষ্ট্রপক্ষ আর খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
ইএস/এএসআর