ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নগরে স্বস্তির স্বপ্ন: শেডে ঢুকছে খোলা ডাস্টবিন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬
নগরে স্বস্তির স্বপ্ন: শেডে ঢুকছে খোলা ডাস্টবিন ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঢাকা সিটির প্রধান প্রধান সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ডাস্টবিন। পরিবর্তে বসানো হচ্ছে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) অথবা ময়লা ফেলার শেড।

এতে নগরবাসীকে আর ডাস্টবিন ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লার গন্ধে অতিষ্ঠ হতে হবে না।  
 
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে নতুন বাজার সড়কের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে এমনই এক ময়লা ফেলার শেড। স্বাস্থ্যসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে আবর্জনা অপসারণের উদ্দেশ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এতে সড়কের উপর ময়লার কনটেইনার থাকবে না। ফলে থাকবে না কনটেইনারের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার উৎকট গন্ধ। কার্যত চার দেয়ালে বন্দি থাকবে এসব। এসটিএস’র উপরে থাকবে বিশাল টিনের ছাউনি।
 
ময়লাভর্তি ট্রাক সরাসরি এর মধ্যে ঢুকতে পারবে। যেনো দুর্গন্ধ না ছড়ায় সেজন্য দেয়াল থেকে টিনের ছাউনি অনেক উঁচুতে থাকবে। এসটিএস’র মধ্যে রয়েছে ড্রেনেজ সিস্টেম ও পানির ঝরনা। ময়লা নিয়ে যাওয়ার পরপরই চোখের পলকে ধুয়ে ফেলা হবে এসটিএস।
 
নতুন বাজারে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এসটিএস নির্মাণের কাজ। রাজমিস্ত্রি সফিকুলের তত্ত্বাবধানে প্রায় চার থেকে পাঁচজন এসটিএস’র দেয়াল প্লাস্টার করছেন। অন্যরা অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

বাংলানিউজকে সফিকুল বলেন, ১০ দিনে ময়লার ডাসবিন (ডাস্টবিন) তৈরি হয়ে যাবে। ভেতরে ময়লার টিরাক (ট্রাক) ডাইরেক (সরাসরি) পোবেশ (প্রবেশ) করবে। আবার টিরাক ময়লা নিয়া চলে যাবে।
 
তিনি আরও বলেন, দিয়ালের (দেওয়াল) চার ফুট পর পর  ঝরনা আছে। ময়লা নিয়া শেষ হলে সুইজ টিপ দিলেই ধুয়া (পরিষ্কার) শুরু।

টিনের ছাউনি নির্মাণের কাজে ব্যস্ত রিপন। সেজন্য লোহার গার্ডার তৈরিতে মগ্ন তিনি।

টিনের ছাউনি প্রসঙ্গে রিপন বলেন, উপরে টিনের চাল হবে। চালের দুই পাশ উঁচু হবে যেনো ভেতরে গন্ধ তৈরি না হয়। টিনের চাল এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেনো রোদের আলো ময়লার উপরে পড়ে ও বৃষ্টির পানি না পড়ে।
 
অন্যদিকে দেখা গেলো, কুড়িল বিশ্বরোডে এসটিএস নির্মাণ প্রায় সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
 
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, শুধু কুড়িল বিশ্বরোড নয়, নিকুঞ্জ ও রামপুরাসহ ৩৬টি এসটিএস এর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে ৭২টি এসটিএস নির্মাণ করা হবে। চলতি বছরের মার্চের মধ্যে এগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এছাড়া ১২টি এসটিএস নির্মাণ করা হয়েছে।
 
প্রয়োজন অনুসারে ছোট-বড় আকারে নির্মাণ করা হয়েছে এসটিএসগুলো। যেমন, নতুন বাজারের এসটিএস’র আয়তন ৩৫শ’ বর্গফুট, কুড়িল বিশ্বরোডে দুই হাজার ৬০ বর্গফুট, নিকুঞ্জে দুই হাজার ৪০ বর্গফুট ও রামপুরা-বনানী রোড সংলগ্ন ২৩শ’ বর্গফুটের এসটিএস নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই হাজার বর্গফুটের একটি এসটিএস নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব তহবিল থেকে এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।

এসটিএস প্রসঙ্গে ডিএনসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’টি করে এসটিএস নির্মাণ করবো। আমাদের নিজস্ব তহবিলের অর্থ দিয়ে এগুলো নির্মাণ করা হবে। আগে ১২টি নির্মাণ করা আছে, নতুন করে ৩৬টির নির্মাণ কাজ চলছে। আশা করছি, চলতি বছরের মার্চ মাসে আমাদের মেয়র (আনিসুল হক) এগুলো উদ্বোধন করবেন।

‘উন্নত দেশের মতো নগরবাসী আর ময়লার স্তূপ দেখবে না। কোথায় ময়লা নিয়ে যাওয়া হবে, কোথায় ফেলা হবে কিছুই টের পাবেন না নগরবাসী। ’
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসটিএস নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে, গৃহায়ণ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), ঢাকা ওয়াসা, গণপূর্ত, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর জায়গায় এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ কোনো টাকা খরচ করা হচ্ছে না। তবে জমি দিতে গিয়ে টালবাহনা করছে রাজউক ও গণপূর্ত অধিদফতর।
 
প্রতিটি এসটিএস নির্মাণে সময় নির্ধারণ করা হচ্ছে ১০ বছর। প্রতি বর্গফুট এসটিএস নির্মাণ খরচ হচ্ছে ১২শ’ টাকা।
 
তিনি আরও বলেন, ময়লা ব্যবস্থাপনার জন্য পলিসি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে ডিএনসিসি। দিনে আর ময়লা ব্যবস্থাপনা কাযর্ক্রম নয়। সন্ধ্যার পর এসটিএস-এ ময়লা আনা হবে ও রাতের মধেই অপসারণ। এসটিএস’র ময়লা সাভারের আমিন বাজারে ৫০ একর ল্যান্ডফিল্ডে অপসারণ করা হবে। এই ল্যান্ডফিল্ডের ময়লা থেকে তৈরি হবে বায়োগ্যাস।
 
ডিএসসিসি’র সুপারেনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) মেজবাহউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, এসটিএস নির্মাণ হয়ে গেলে দিনের বেলায় আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করবো না। সন্ধ্যায় এসটিএস-এ ময়লা আসবে, আবার রাতের মধেই অপসারণ হবে। উন্নত দেশের মতো নগরবাসী যেনো চোখে ময়লা না দেখতে পায়, সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬
এমআইএস/এসএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।