ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিচারাধীন মামলা পরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাকে।
জনস্বার্থে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে গত ০৪ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠি ইস্যু করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে আলবদর শামসুল হক গং, শামসুল হোসেন তরফদার এবং অন্যান্য মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টতা থেকে প্রত্যাহার করা হলো। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিচালনাধীন কোনো মামলা পরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ আদেশটি জনস্বার্থে দেওয়া হলো’।
চিঠিতে জনস্বার্থে মোহাম্মদ আলীকে এ আদেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক ময়মনসিংহের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হান্নানের মামলায় অনৈতিক-অসদাচরণ আচরণ করায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রসিকিউশন। এর আগেও মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ উঠেছিল প্রসিকিউশন থেকে।
চিঠির বিষয়ে মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) মোহাম্মদ আলী সঙ্গে মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। পেশাগত দিক দিয়ে আমাকে বারবারই বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ চিঠি পেয়ে আমি বিব্রতবোধ করছি।
তবে কি কারণে তার বিরুদ্ধে এমন চিঠি ইস্যু করা হয়েছে সে বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর সঙ্গে কথা বলার পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলবেন বলে জানান তিনি।
এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে ও জুনে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ এনেছিলেন প্রসিকিউশন টিমেরই আরেক সদস্য ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। মোহাম্মদ আলীও সে সময় তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
দুই প্রসিকিউটরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে সে সময় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে এক পর্যায়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।
সে সময় ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর হায়দাল আলীর কাছে করা লিখিত অভিযোগে তুরিন আফরোজ উল্লেখ করেছিলেন, ‘২০১৪ সালের ১১ জুন (বুধবার) বেলা সোয়া ২টায় ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের পক্ষে সহকর্মী মোহাম্মদ আলী একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। যা প্রধান কৌঁসুলির অনুমতি ছাড়া করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী আমার সম্পর্কে যেসব অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়’।
তুরিন আফরোজ লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, ‘মোহাম্মদ আলী অনবরত আমার সম্মান নষ্টের জন্য অপেশাদারি আচরণ করছেন। আমার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছেন’।
তুরিন আফরোজ লিখিত অভিযোগে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আরজি জানিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর হায়দার আলীর কাছে।
দুই বছর আগে প্রসিকিউশন টিমের দুই সদস্যের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বাংলানিউজকে।
তবে গত বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে চিফ প্রসিকিউটরের ইস্যু করা চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি জানতে আমি চিফ প্রসিকিউটরকে ফোন দিয়েছিলাম, তার ফোন বন্ধ পেয়েছি। কথা বলা সম্ভব হয়নি। ফলে জানা সম্ভব হয়নি কি কারণে চিফ প্রসিকিউটর এমন চিঠি ইস্যু করলেন।
তিনি বলেন, তাই না জেনে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে এর আগের অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এমন পরিস্থিতির পুণরাবৃত্তি ঘটেছে বলেই মনে করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘একজন প্রসিকিউটরের অদক্ষতা, অযোগ্যতার দায় গোটা প্রসিকিউশন নিতে পারেন না। মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে একাধিকবার অপেশাদারি আচরণের অভিযোগ উঠেছে। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। আর হয়নি বলেই আবারও এ ধরনের পরিস্থিতির পুণরাবৃত্তি ঘটেছে’।
তিনি এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৬
এমএইচপি/এএসআর