নারায়ণগঞ্জ: গ্রাহকসেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জের ৫টি জোনের ডিপিডিসির ( ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে শহরের কিল্লারপুলস্থ ডিপিডিসি পূর্ব ও পশ্চিম জোনের কার্যালয়ে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, শীতলক্ষ্যা ও সিদ্ধিরগঞ্জ জোনেও একই অবস্থা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে শহরের কিল্লারপুলস্থ ডিপিডিসি পূর্ব ও পশ্চিম জোনের কার্যালয়, ফতুল্লা, শীতলক্ষ্যা ও সিদ্ধিরগঞ্জ জোনের কার্যালয় থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসে উঠিয়ে ঢাকায় নিয়ে যান ডিপিডিসি শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান। এর মধ্যে অনেকে স্বেচ্ছায় গেলেও অনেকে গেছেন অনিচ্ছায়। বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকায় একটি ঘেরাও কর্মসূচিতে তাদের নেয়া হয়েছিলো।
জানা গেছে, ওয়াহিদুর রহমান ডিপিডিসির একজন লাইনম্যান হলেও কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা হওয়ার সুবাদে তিনি ডিপিডিসির নারায়ণগঞ্জস্থ কার্যালয়গুলোতে দোর্দণ্ড দাপট খাটান। তার দাপটে ডিপিডিসির প্রকৌশলীরা পর্যন্ত অসহায় থাকেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের কিল্লারপুলস্থ ডিপিডিসি পূর্ব ও পশ্চিম জোনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ডিপিডিসির পূর্ব জোনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগ কক্ষই তালাবদ্ধ। কয়েকটি কক্ষ খোলা থাকলেও সেখানেও কেউ নেই।
পূর্ব জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনউদ্দিনের কক্ষের সামনে গেলে পিয়ন আমির হোসেন জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে নেই। ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন। অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে শুধুমাত্র প্রকৌশলী অলিউর রহমানকে তার কক্ষে দেখা গেছে। গ্রাহক সেবা ও মিটার পরিবর্তনের কক্ষটিও তালাবদ্ধ দেখা গেছে।
একইভাবে পশ্চিম জোনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগ কক্ষই ছিল তালাবদ্ধ ও ফাঁকা। পশ্চিমের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের কক্ষের সামনে গেলে পিয়ন আলম জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে নেই। ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন। কোন প্রয়োজন থাকলে প্রকৌশলী প্রণব ও আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
সেবা না পেয়ে মঙ্গলবার সকালে কার্যালয় থেকে ফিরে যান অনেক গ্রাহক। কথা হয় এমনই কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে। শহরের নয়ামাটি এলাকার রাকিবুল হাসান জানান, তিনি বিদ্যুতের সংযোগের বিষয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ কক্ষ বন্ধ থাকায় সেবা না পেয়ে তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে। লোকজন থাকবে না জানলে তিনি অফিসে আসতেন না। অফিসে আসতে গিয়ে তাকে ৭০ টাকা রিকশাভাড়া গুণতে হয়েছে।
শহরের খানপুর এলাকার তারেক জানান, হঠাৎ করেই তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। অফিসে এসে দেখেন কেউ নেই। চাষাঢ়া এলাকার মাজহারুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ডিপিডিসির কিল্লারপুলস্থ গিয়ে মনে হয়েছে যেন ছুটির আমেজ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে ডিপিডিসি শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি জানান, দ্রুত নির্বাচন প্রদান, ইনসেনটিভ বোনাস ও সুনির্দিষ্ট পেস্কেলসহ ২২ দফা দাবিতে মঙ্গলবার আন্দোলনে নেমেছিল ডিপিডিসির কর্মচারীরা।
গ্রাহক সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামার যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো সবসময়ই সেবা দেই। মঙ্গলবার কিছু সময়ের জন্য আমরা আন্দোলনে গিয়েছিলাম। একজন লাইনম্যান হয়েও অফিসে দাপট খাটানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন আমি কখনোই কোন কর্মকর্তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি।
ডিপিডিসির ১২টি এনওসিএস (জোন) এর দায়িত্বে থাকা প্রধান প্রকৌশলী (সাউথ) একরামুল হক জানান, ডিপিডিসির পূর্ব ও পশ্চিমের দুই নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৩৬ জন নির্বাহী প্রকৌশলী প্রশিক্ষণে রয়েছেন। কয়েকজন প্রকৌশলী হয়তো সাইটে গেছে। এছাড়া অনেক কর্মচারী সিবিএর আন্দোলনে গেছে। তবে গ্রাহকসেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনে যাওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। এ বিষয়ে তিনি অফিসের নিয়মানুযায়ী পদক্ষেপ নিবেন। এছাড়া ঊর্ধ্বতনদের এ বিষয়টি অবহিত করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
আরআই