ঢাকা: একাই করেন ৩৮টি মন্ত্রণালয়ের কাজ। তৃণমূলে পৌঁছে দেন সব সরকারি সেবা।
বেতন ছাড়ে চেয়ে থাকতে হয় ‘তীর্থের কাকের’ মতো। ক্ষেত্র বিশেষে করতে হয় তদবির। ইউনিয়ন পরিষদে ‘মুখ্য ভূমিকা’ পালন করেও পান না শতভাগ সরকারি সুযোগ-সুবিধা।
শতভাগ বেতন সুপারিশের ফাইল সব দফতর ঘুরে অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর দফতরে। কিন্তু ‘বাজেট নেই’ অজুহাত দেখিয়ে প্রায় দু’বছর আটকে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।
এ দুর্দশা দেশের দেশের ৪ হাজার ৫৭১ জন ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের।
শিগগিরই শতভাগ বেতন অনুমোদিত না হলে কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ সেক্রেটারি সমিতি (বাপসা) নেতারা।
দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের পদবী পরিবর্তন করে ১০ম গ্রেড স্কেল, সরকারি কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন-ভাতাসহ সুবিধা ও পেনশন প্রদান।
বাপসা’র সভাপতি শেখ হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দু’বছর আগে সরকারি কোষাগার থেকে শতভাগ সুবিধা দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সুপারিশ করে।
পরে সুপারিশের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফজলে রাব্বির স্বাক্ষর শেষে অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
‘বাজেট নেই’ এবং শতভাগ সুবিধা দেওয়া অসম্ভব বলে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বাপসা সূত্র জানায়, ইউপি সচিবরা টিআর, কাবিখা, এলজিএসপি কর্মসূচি, হাইস প্রকল্প, বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্ব ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, ত্রাণ বিতরণের কাজ করেন।
অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্প, এডিবি, বিভিন্ন জরিপ, গ্রাম্য আদালত পরিচালনায় সহায়তা, নাগরিক, ওয়ারিশ ও আয়-ব্যয়ের সনদপত্র দিয়ে থাকেন তারা।
এছাড়া সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করে থাকেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ সচিবরা পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করেন।
একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান থাকলেও ৩৮টি মন্ত্রণালয়ের অনেকটা নাভি হিসেবে কাজ করেন এ সচিবরা। এতো সব করেও বছরের পর বছর চরম অবহেলার শিকার হয়ে আসছেন তারা।
বাপসা সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের লোকাল কাউন্সিল সার্ভিস রুলস, ১৯৬৮ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয়।
এরপর ১৯৭৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের বেতন-ভাতা জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করেন।
১৯৯৮ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতাসহ শতভাগ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া শতভাগ না দিয়ে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেন। বাকি ২৫ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদ তহবিল থেকে পাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
তবে, দেশের ৩টি পার্বত্য জেলার (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) ইউনিয়ন পরিষদ সচিবরা সরকারের দেওয়া ৭৫ শতাংশ সুবিধার বাইরে কোনো সুবিধা পান না।
সূত্র জানায়, সরকারের দেওয়া ৭৫ শতাংশ বেতন ও সুবিধাদি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চার কিস্তিতে দেওয়া হয়। চাহিদা পূরণ না হলে বেতন-ভাতা আটকে যায়।
অনেক সময় ৩-৫ মাসেও পাওয়া যায় না। এছাড়া ২৫ শতাংশ উপজেলা অফিস থেকে পেতে লাগে কয়েক মাস। এতে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করেন ইউপি সচিবরা।
সূত্র আরো জানায়, ২০১৩ সালে দেশের ৪ হাজার ৫৭১ জন ইউনিয়ন পরিষদ সচিবকে শতভাগ সুবিধা ও তাদের তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার দাবি ওঠে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে আইন, জনপ্রশাসন ও শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু শতভাগ করা সম্ভব নয় বলে আবারো জানিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেলে ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের ১৪তম গ্রেডে রাখা হয়েছে। তারা গ্রেড পরিবর্তন করে ১০ম গ্রেডে আনারও দাবি জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া সচিব কমর উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, মন্ত্রণালয়ের এমন কোনো কাজ নেই যা আমাদের করা হয় না।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সরকারি কোষাগারের ৭৫ শতাংশ সময়মতো তো নয়ই, অনেক সময় ৫-৬ মাসেও পাওয়া যায় না।
মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ ও প্রকল্পে চেয়ারম্যানরা ভুল করেন। সে ভুলের দায়িত্ব নিতে হয় আমাদের। অবসরে সরকারি বিধির বেশিরভাগ মানা হয় না বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
আরইউ/এএসআর