ঢাকা: বাগেরহাটের খানজাহান বিমানবন্দর নির্মাণ শুরু হয়নি গত ২০ বছরেও। ১৯৯৬ সালে প্রকল্প শুরু হওয়ার পরপরই অর্থের অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
নির্মাণ কাজের এ ধীরগতির জন্য বেবিচকের (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) অবহেলাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে এর ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট বেবিচকের কাছে জমা দেয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ওই বছরের ২২ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের এডিপির মাসিক পর্যালোচনা সভায় নিজস্ব অর্থায়নে এ বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ৫ মে একনেকের বৈঠকে খানজাহান আলী বিমানন্দর প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
এরপর থেকে বেবিচকের ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রের অভিযোগ, প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় ৯ মাস পার হয়ে গেলেও এখনো জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়নি। এ বিষয়ে তেমন কোনো সিদ্ধান্তই নেয়নি বেবিচক।
তিন বছরের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও এক বছরে যদি জমি অধিগ্রহণই সম্পন্ন না করতে পারে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পে কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে যাবে বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এসব বিষযে মুখ খুলতে নারাজ বেবিচক কর্তৃপক্ষ। বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পটির বিষয়ে শুধু গণমাধ্যমই নয়, কারো সঙ্গে আমরা কর্মকর্তারা কোনো কথা বলতে পারবো না। আমাদের মৌখিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। এ বিষয়ে একমাত্র কথা বলার এখতিয়ার রাখেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম সানাউল হক।
এসব বিষয়ে একাধিকবার বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম সানাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ এখনো সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, খানজাহান আলী বিমানবন্দরটি প্রকল্পের কাজ বেবিচক কর্তৃপক্ষের আওতাধীন আছে। তবে এখনো প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়নি। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
খানজাহান আলী মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন দেখতে প্রতি বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় জমে বাগেরহাটে। কিন্তু বাগেরহাটে বিমানবন্দর না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় পর্যটকদের। ফলে বিমানবন্দরটি নির্মাণ জরুরি বলে মনে করছেন বেসরকারি এয়ারলাইন্স ও ট্যুর এজেন্সিগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বাংলানিউজক বলেন, খুলনা শহর, মংলা বন্দর ও সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমানবন্দরটি অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর হওয়ার আগে অনেকেই বলেছেন যে, সেখানে যাত্রী চাহিদা নেই। কিন্তু এখন নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমানবন্দরটি চালু হলে ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের জন্য স্থানটি অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ট্যুর পরিচালনাকারী এজেন্সি ইসকেপমিনস এর ভাইস প্রেসিডেন্ট শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবনের জন্য প্রচুর বিদেশি পর্যটক যান এই এলাকায়। সড়ক ব্যবস্থা ততোটা উন্নত না থাকায় প্লেনের টিকেট চান বিদেশিরা। বাগেরহাটে আকাশপথে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেউ চাইলে বড়জোড় যশোর পর্যন্ত প্লেনে যেতে পারেন। আর তাই আমাদের পর্যটনের স্বার্থেই বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দরটি জরুরি হয়ে পড়েছে।
খানজাহান আলী বিমানবন্দরটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ৪৯০ কোটি টাকা ও বাকি ৫৪ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় করবে বেবিচক। ২০১৮ সালের জুন মাস নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
ইউএম/এএসআর