ঢাকা: ২০১৩ সালে ঋণে কেনা হয় ৫০টি আর্টিকুলেটেড (দুই বগি জোড়া লাগানো) বাস। বাসগুলোর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিলো ১৫ বছর।
উপযুক্ত রুট, ডেডিকেটেড স্টপেজ, ট্রাফিক জ্যাম, অতিরিক্ত মেরামত ব্যয়, যাত্রী ভোগান্তি ও ভাড়া কম হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে এই বাস না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিসি। এতে ৫০টি বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেলে নতুন রূপে আর ফিরবে না আর্টিকুলেটেড বাস।
আর্টিকুলেটেড বাস না কেনা প্রসঙ্গে বিআরটিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ৫০টি বাসের মধ্যে দু’টি বাস আর চালানো সম্ভব নয়। ৮টি বাস মেরামতের জন্য ডিপোতে রয়েছে। আমরা নতুন করে আর কোনো আর্টিকুলেটেড বাস কিনবো না। এই বাস চলার জন্য আলাদা রুট ও লেন দরকার, যা আমাদের দেশে নেই।
১শ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম বাসগুলো। ভারতীয় কোম্পানি অশোক লে ল্যান্ডের ৫০টি বাস কিনতে মোট ব্যয় হয়েছিলো ৬১ কোটি দুই লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ভারতীয় ঋণ। বাকি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে মেটানো হয়েছে। প্রতিটি বাসের মূল্য পড়ে এক কোটি ২২ লাখ টাকা।
অথচ অবহেলা ও অযত্নে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে বাসগুলো। বর্তমানে গাজীপুর থেকে ঢাকার কয়েকটি রুটে চলাচল করছে এগুলো। হয়তো কয়েক বছর পর বাসগুলো আর চোখে পড়বে না।
‘প্রকিউরমেন্ট অব ডবল ডেকার, সিঙ্গেল ডেকার এসি অ্যান্ড আর্টিকুলেটেড বাস ফর বিআরটিসি’ প্রকল্পের আওতায় বাসগুলো কেনা হয়। বর্তমানে বিআরটিসি’র ৭শ ৯৭টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ২শ ৬৩টি দোতলা বাস। ৭শ ৯৭টি বাসের মধ্যে ৩শটি ডাবল ডেকার ঢাকা শহরে চলাচল করে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ বাস পুরনো।
ঢাকা শহরে জনসাধারণের চাহিদার তুলনায় বিআরটিসি বাসের সংখ্যা কম। অন্য জেলাতেও বাসের সংখ্যা হাতে গোনা। এসব সমস্যা নিরসনে ২শ ৯০টি ডাবল ডেকার, ৮৮টি একতলা এসি ও ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনা হয়। বাস, খুচরা যন্ত্রাংশ, প্রয়োজনীয় ভ্যাট, অন্য চার্জ ও আনুষঙ্গিক মোট ব্যয় হয় ৩শ ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনা বাবদ খরচ পড়ে ৬১ কোটি দুই লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাসগুলো কেনা শেষ হয়। অথচ তিন বছর না যেতেই বিকল হতে বসেছে বাসগুলো। বার বার প্রয়োজন পড়ছে জোড়া লাগানো অংশের মেরামতের।
তবে বিআরটিসি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মধ্যে ১৫টি বিকল হয়ে গাজীপুর ডিপোতে পড়ে রয়েছে। বাসগুলোর রাবারের অংশও নষ্ট হয়ে গেছে। একটি বাস মেরামত করতে মোট খরচ পড়বে ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি বাসের জোড়া লাগানো অংশের দাম ৩৪ লাখ ও উপরের কালো রাবারের দাম সাত লাখ টাকা।
বিআরটিসি পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল (অব.) এ আর পারভেজ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, আর্টিকুলেটেড বাস চলাচলে প্রয়োজন ডেডিকেটেড রুট, স্টপেজ ও আলাদা লেন। ঢাকা শহরে এসব রুট থাকা দূরের কথা ট্রাফিক জ্যামের কারণে যাত্রীরা অনেক সময় বিরক্ত হন। বাসগুলো টার্ন নিতে যে স্পেস দরকার হয় ঢাকার রাস্তায় সেই পরিমাণে জায়গা নেই। এজন্য যেখানে টার্ন নেওয়ার দরকার সেখানে না নিয়ে অন্য কোথাও নিতে হচ্ছে। এতে অহেতুক বেশি পথ পাড়ি দিতে হয় আর্টিকুলেটেড বাসগুলোতে। এর ফলে অতিরিক্ত সময় ও ব্যয় হচ্ছে।
‘যাত্রী ও পথচারীরা অনেক সময় কালো রাবারের অংশ কেটে ফেলার পাশাপাশি ছিঁড়েও ফেলেন। এর ফলে বার বার রাবার মেরামত করতে হয়। বাসগুলোতে যাত্রী কম হওয়ার কারণে পরিচালন খরচও বেশি পড়ছে। ফলে প্রতিনিয়তই আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ’
অন্যদিকে, ১শটি আর্টিকুলেটেড বাস কেনার পরিকল্পনা করেছিলো বিআরটিসি। বাস কেনা বাবদ ১শ ৪৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঢাকা শহরে আর্টিকুলেটেড বাসকে ঝামেলা মনে করে এই বাস কেনা থেকে সরে এসেছে বিআরটিসি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
এমআইএস/এসএস