শহীদ মিনার থেকে: চারদিকে চলছে কাজ। কেউ ঘষাঘষি করছেন, কেউ হোসপাইপে পানি ছেটাচ্ছেন, কেউ ঝাড়ু দিয়ে ঝাঁট দিচ্ছেন, কেউ রয়েছেন তদারকিতে।
সময় তো এখনও বেশ কিছুদিন বাকি, এতো অস্থিরতা কেন? জানতে চাইলে তারেক বাংলানিউজকে বলেন, দেখে কম মনে হলেও পুরো শহীদ মিনারকে জাতির শ্রদ্ধার জন্য প্রস্তত করতে ম্যালা কাজ করতে হয় আমাদের। সময় মতো শেষ করারও ব্যাপার আছে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে কাজ শুরু করেছি যা চলবে টানা ২০ তারিখ পর্যন্ত।
তারেক এই গ্রুপের প্রধান। নিজে একজন রঙ মিস্ত্রি। একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মূল মিনার, বেদী, প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের দেয়াল-রাস্তা পরিষ্কারের দায়িত্ব তাদের।
গত আট বছর ধরে প্রতি বছরিই শহীদ মিনার সাফ-সুতরো করার কাজে রয়েছেন তারেক। জানালেন, মূলত তিনধাপে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজটি সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ১২-১৩ দিন পর্যন্ত ৩০ জন কাজ করে। এরপরের ধাপে আরও ১০ জন যোগ দেন এবং শেষের দুই-তিন দিন থাকেন মোট ৫০ জনের মতো। শেষের দিকে তো দিন-রাত মিলিয়ে কাজ হয়।
তারেক জানান, পরিষ্কার করার কাজের গ্রুপ, পাথরের কাজের লোক, রঙ, রাজমিস্ত্রি, পৃথক পৃথক টিম কাজ করছে।
যাদের মধ্যে রয়েছে সোহাইল, ফরহাদ, সোহাগ, লাবলু, হৃদয়, শওকত, নূর আরও অনেকে।
কাজের মধ্যে রয়েছে সীমানা প্রাচীর পরিষ্কার, পোস্টার উঠানো, পানি ও পাউডার দিয়ে পরিষ্কার, সড়ক পরিষ্কার, বাউন্ডারির গ্রিল রঙ, চারপাশে গাছের গোড়া রঙ করা, মার্বেল সংস্কার ও কেমিক্যাল দিয়ে পরিষ্কার, প্রধান মিনার পরিষ্কার, মিনারে পুটিং করা, মিনারে সাদা রঙ (ওয়েদার কোট)দেওয়া, মিনার গ্রিলে এনামেল (কালো) ব্যবহার, মূল বেদীতে গাড়ো লালসহ সবগুলো বেদীতে এনামেল দেওয়া, আশেপাশের সাইনবোর্ড বা বিজ্ঞপ্তিগুলো পরিষ্কার অন্যতম কাজ।
পরিচ্ছন্নতার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা জানান, ভাষার জন্য যে রাস্তায় বুকের লাল রক্ত ঢেলে দেন শহীদরা তাদের সে রঙে পুরো বেদী রাঙিয়ে যাবে। কাজে কোনো ক্রটি নেই তাদের। সারাদেশ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে শহীদদের, এটি কী কম বড় কথা।
তবে তারা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, শুধু ফেব্রুয়ারি এলেই কেন তাদের ডাক পড়ে পরিষ্কারের জন্য। বাকি ১১ মাসও যদি টুকটাক করে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে দেওয়া যেত তবে স্থানটির মূল্যায়ন বা পত্রিতা আমারা সব সময়ই ধরে রাখতে পারতাম। এছাড়া তারা ক্ষোভ জানান, মিনারে মেডিকেল কলেজ অংশের পেছনে এবং তার ঠিক বিপরীতে দৈনিক মল-মূত্র ত্যাগ করছেন মানুষজন। এতে কাজেও যেমন সমস্যা হচ্ছে ঠিক তেমনি নষ্ট হচ্ছে পবিত্রতাও।
শহীদ মিনারে দায়িত্ব পালনকারী লালবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুলের সঙ্গে কথা হয়। কথা বলে জানা যায়, শাহবাগ পুলিশ গ্রন্থমেলা নিয়ে ডিউটিতে থাকায় এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে এখন লালবাগ থানার পুলিশ।
পরিচ্ছন্নকর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আশরাফ বলেন, এটি বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। আর আমাদের কাজ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে, কে কী করলো তা দেখা নয়।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কনস্টেবল বললেন, সময় মতো প্রস্তুত হয়ে যাবে শহীদ মিনার, কাজ তো হচ্ছেই। তখন হাজারো ফুলে ফুলে ভরে উঠবে বেদী- কোনো সমস্যা হবে না। ফিরতি প্রশ্ন ছিল শ্রদ্ধা কি শুধু এই এক মাসের জন্যই, আপনাদের-আমাদের একটা দায়িত্ব আছে না…তার কোনও উত্তর অবশ্য তিনি দিলেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
আইএ/