ঢাকা: প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের হাতেখড়ি উৎসব।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সকাল ১০টায় নবম বারের মত হাতেখড়ি উৎসবের আয়োজন করে হাতেখড়ি জাতীয় পরিষদ।
সংগঠনের চেয়ারম্যান কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, মামুনুর রশিদ সহ অনেক গুণীজন। এ বছর হাতেখড়ি নিয়েছেন ৩৮ জন শিশু।
সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কোমলমতি শিশুদের পদচারণে মুখরিত ছিল সেগুনবাগিচায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
সকালে দেশাত্মবোধক গানের মধ্য থেকে শুরু হয় হাতেখড়ি উৎসব। তবে মূল অনুষ্ঠান শুরু করেন ঘণ্টা বাজিয়ে কামাল লোহানী। এরপর একে একে সারিবদ্ধ ভাবে মঞ্চে থাকা গুণীজনদের কোলে বসে বা পাশে দাঁড়িয়ে বাংলা বর্ণ লিখতে থাকে শিশুরা। সকাল সাড়ে ১১টায় শেষ হয় হাতেখড়ি উৎসবের মূল অনুষ্ঠান। এরপর আবার শুরু হয় নাচ-গান সহ নানা অনুষ্ঠান।
এ সময় নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ করেছি, কিন্তু বাঙ্গালি হতে পারিনি।
বিদেশি সংস্কৃতি পালনে ব্যস্ত থাকেন সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষ। কিন্তু তারা আমাদের দীর্ঘ দিনের সংস্কৃতি পালন করতে ভুলে গেছেন।
বাঙ্গালির উৎসব ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এ সময় গণমাধ্যমের প্রতি আহ্ববান জানান হাসান ইমাম। কামাল লোহানী উপস্থিত শিশুদের মা-বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সম্পর্কে বাচ্চাদের জানাবেন। তাদের এই মহান দুই বিষয় ধারণ করতে শেখাবেন।
এ সময় কিশোরদের উদ্দেশ্যে বলেন, মন প্রাণ দিয়ে দেশকে ভালবাসবে। ভালবেসে যে জ্ঞান অর্জন করবে, তা তোমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এর আগের বছরগুলোতে হাতেখড়ি উৎসব পালন হতো ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম শুক্রবার। তবে এবার এই উৎসব দ্বিতীয় শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হাতেখড়ি উৎসব আয়োজনের কথা জানাতে গিয়ে আয়োজকরা জানান, বহু আগ থেকে হাতেখড়ি উৎসবের প্রচলন আছে। এক সময় মুসলমানরা মৌলবী এনে শিন্নি বা পায়েস রান্না করে বা মিলাদের মাধ্যমে বাড়ির শিশুটিকে স্বজন বা হুজুরের কোলে বসিয়ে বাংলা প্রথম অক্ষর বা আরবি প্রথম অক্ষর লিখিয়ে তাক্তি বা হতেখড়ি দিতেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সংস্কৃত অক্ষর দিয়ে হাতেখড়ি দিতেন এবং ব্রাহ্মণ বা মাতুল অথবা পিতা-মাতার হতে ধরে শিশুকে প্রথম লিখতে শিখান। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মাঘ মাসের শুল্কা পঞ্চমী তিথিতে অর্থ্যাৎ স্বরস্বতী পূঁজার দিন হাতেখড়ির আয়োজন করতো।
তবে বর্তমানে এই উৎসব পালন আগের মত হয় না। তাই টানা নয় বছর ধরে উৎসবটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজন করা হচ্ছে।
উৎসবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিশুদের হাতে আদর্শ লিপি হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। মঞ্চের পাশের টেবিলে খই, মুড়ি, বাতাসা সহ অনেক মিঠাই সাজিয়ে রাখা হয় সবার খাওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
এফবি/আরআই