ময়মনসিংহ: বাঙালির অনেক উৎসবের মতোই পিঠা উৎসব সুপ্রাচীন কালের। পঞ্জিকার নিয়মে, প্রকৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে শীত।
এমন আয়োজনে রকমারি পিঠার চিরচেনা স্বাদ ও গন্ধ মাতিয়ে রাখলো সবাইকে। উৎসবে এসে অনেকেই যেন ফিরে গেলেন হারানো শৈশবে।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ময়মনসিংহ নগরীর ৫০ বাউন্ডারি রোডের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য ও ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মো. ইকরামুল হক টিটু।
ফাল্গুনের হাত ধরেই প্রকৃতিতে আসে বসন্ত। বাঙালির মিলন বার্তা বাহক ঋতুরাজ বসন্ত শুরুর খানিকটা সময় আগে অনিন্দ্য সুন্দর এ পিঠা উৎসবে ঠাঁই পায় ভাপা, পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, নকশী পিঠা, ঝাল পিঠা, চিতই পিঠা, সবজি পুলি, কলার পিঠা, ডালিম পিঠা, লবঙ্ক পিঠা, ফুল পিঠাসহ ১৫ পদের পিঠা।
প্রায় অর্ধশতাধিক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এ পিঠা উৎসবে। বড় বড় বাক্সে সাজানো রকমারি পিঠার স্বাদ-গন্ধ চেখে দেখতে মাঘের শেষ সন্ধ্যায় সেখানে হাজির হয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের মুখে ছিলো সুস্বাদু ও জনপ্রিয় এসব পিঠার গুণকীর্তন।
এ পিঠা উৎসব চলাকালে মঞ্চের ঠিক বাম পাশে উনুনে আগুন চড়িয়ে চালের গুড়া, নারকেল আর খেজুর গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন মো. সেলিম। পঁয়ত্রিশের মতো বয়স তার।
পাতলা কাপড়ের আস্তরণে হাঁড়িতে টগবগ করে ফুটতে থাকা গরম পানিতে ভাঁপ দিয়ে গোলাকার এ পিঠা তৈরি করছিলেন তিনি। নগরীর যে কোনো উৎসব-পার্বণেই ভাপা পিঠা তৈরিতে ডাক পড়ে তার।
দু’জন সঙ্গী নিয়ে সন্ধ্যা থেকেই সহজলভ্য উপাদানে মজাদার এ পিঠা বানানোর ধুম পড়েছিলো। এজন্য মজুরি বাবাদ তিনি পাবেন ৩ হাজার টাকা।
বাঙালির চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতেই স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ফারহানা আক্তার জ্যোতিকে (১৪) নিয়ে পিঠা উৎসবে এসেছেন মিনারা খাতুন।
স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, এমন একটা সময় ছিলো যখন আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে পিঠা খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ প্রচলিত ছিলো। কিন্তু এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। শীতের সময়ে এখন আর বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথিদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয় না। এর ফলে দিনে দিনে পরিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বন্ধন সুদৃঢ় করতে শহরের নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সব পিঠার পরিচিতি তুলে ধরতে এ উৎসবের সুদুরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে।
স্কুলপড়ুয়া জ্যোতি এ পিঠা উৎসবে আসতে পেরে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। তার মতে, খাওয়ার চেয়ে এতো পিঠা একসঙ্গে দেখার আনন্দই বেশি।
গত কয়েক বছর ধরে শীতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে আসছেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম। পিঠা উৎসবের মধ্যে দিয়ে তিনি বাঙালিত্বকে খুঁজে পান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বছরের অন্তত একটা দিন সবাই একসঙ্গে পিঠা খেয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠা নিঃসন্দেহে আনন্দের।
পিঠা উৎসব আয়োজনের প্রশংসা করে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ উৎসবের মধ্যে দিয়ে নিজেদের ভেতর সম্প্রীতি গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য ও ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, নানা টানাপোড়েনে বাঙালির জীবন থেকে পিঠা-পুলি উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬
আরএম