ঢাকা: ঘরের কাজে নারীদের সহযোগিতা করতে পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংসারে সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে কাজ ভাগাভাগি করে করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজে সহযোগিতা করলে তাতে লজ্জার কিছু নেই।
শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা সংসার চালাতে গেলে সারাদিন মেয়েদের পরিশ্রম করতে হয়। একটা অদ্ভূত ব্যাপার, দেখা গেলো একই সঙ্গে দু’জনই চাকরি করছে কিন্তু ঘরে ফিরে দেখা যাবে, পুরুষ সদস্যটি বলছে উফ আমি ভীষণ ক্লান্ত; এক কাপ চা বানিয়ে দাও তো।
‘আর মেয়েদের ঘরে ফিরেই ছেলে-মেয়েরা কী অবস্থায় আছে তা দেখতে হবে। রান্না-বান্না কী হলো সেটা দেখতে হবে। খাবার দিতে হবে। সব কিছু পরিস্কার করতে হবে। একাই করতে হয়। ’
তিনি বলেন, আমাদের সমাজ পুরুষ শাসিত। তাই উনারা তাড়াতাড়ি টায়ার্ড হয়ে পড়েন। আশা করি আর টায়ার্ড হবেন না! সবাই সবাইকে সহযোগিতা করবেন যেন কেউ টায়ার্ড না হন, সবাই যেন ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পুরুষরা যদি একটু সচেতন হন, তাহলে কিন্তু কষ্টটা অনেক লাঘব হয়। সেখানে কাজটা ভাগ করে নিতে পারেন। ঠিক আছে একজন যেহেতু রান্না করলো খাবার পরিবেশনের পর সেগুলো সাফ করার দায়িত্বটা পুরুষরা নিতে পারেন। এখানে লজ্জার কিছু নেই।
ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমি এসব শিখেছি আমার ছেলের কাছ থেকে। আমি যখন আমার ছেলের বাসায় গিয়েছি-দেখেছি দু’জনে চাকরি করে ঘরে ফিরতো। ঘরে আমার বউমা সে রান্না করে টেবিল সাজিয়ে খাবার পরিবেশন করতো। এরপর বাকি কাজটা তার। সে নিজেই টেবিল গুছিয়ে সমস্ত হাড়ি পাতিল যা কিছু ধোঁয়া, সব কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে এক সঙ্গে বসে হয় টেলিভিশন দেখতো না হয় গল্পগুজব করে সময় কাটাতো।
কাজ ভাগাভাগি করার সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মেয়ে চাকরি করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনে দিচ্ছে। কাজ যদি দুই জনে ভাগ ভাটোয়ারা করা যায় তাহলে সবাই মিলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভালো সময় কাটানো যায়। একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতিতে নারীর অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে যা কিছু অর্জন তার পেছনে নারীর অবদান রয়েছে। তারপরও নারীদের নানান প্রতিবন্ধকতা, বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের দক্ষতার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দায়িত্ব মেয়েদের দিলে তারা যতটা সুচারুভাবে কাজ করতে পারে অনেক সময় পুরুষরা তা পারে না।
ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, টেনিসসহ বিভিন্ন খেলায় বাংলাদেশের মেয়েদের সফলতার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতানে বাংলাদেশে এগিয়েছে আগে বাংলাদেশ ৮৪তম ছিলো এখন ৬৪তম।
এ সময় তিনি জাতীয় সংসদে প্রথম চারটি পদ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা সবাই নারী এ কথা উল্লেখ করে বলেন এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনিক।
নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগে সরাসরি ভোটে ২১জন এবং সংরক্ষিত ৫০ জন মোট ৭১জন সংসদ সদস্য রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভাবা হতো, নারীরা পুরুষের মতো উচ্চ পদে এসব কাজে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবে না। কিন্তু এসব পদে মেয়েদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি। তারা প্রমাণ করেছেন, তারাও পারেন। আমি বিশ্বাস করি নারীদের অগ্রগতি ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নতি সম্ভব নয়, তাই এসব পদক্ষেপ নিয়েছি।
এ সময় তিনি বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, পুলিশ, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, নারী বৈমানিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন উচ্চ পদে দক্ষতার সঙ্গে নারীদের কাজের প্রশংসা করেন।
ইসলামে নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আজ সব ক্ষেত্রে নারীরা তাদের অর্জন নিশ্চিত করছে।
তিনি বলেন, নারীদের এই এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী নিজের মায়ের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে বাবা তো জেলে জেলে থাকতেন। আর মা মামলা পরিচালনা, উকিলের জন্য দৌঁড়াদৌড়ির সঙ্গে সঙ্গে দল পরিচালনা, সুচারু ভাবে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন।
নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপোলিয়ান বলেছিলেন আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো। তাই শিক্ষার ওপর আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বয়স্ককের জন্য শিক্ষা, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষারও আমরা ব্যবস্থা করেছি।
বিসিএস উইমেন নেটওর্য়াকের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগমের সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদিক, আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন আক্তার, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬, আপডেট: ২২০০ ঘণ্টা
এমইউএম/আরএম/এমএ
** আ’লীগ আমলে উচ্চ পদে এসেছে নারীরা
জাতীয়
ঘরে নারীর কাজে পুরুষের সহায়তা করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।