সিলেট: ‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা- কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে’। গানের চরণই বলে দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তার কথা।
ফাগুনের আগুন ঝরছে শিমুলের ডালে ডালে। গাছগুলো ঝরাচ্ছে ধুলোমাখা পুরনো পাতা। ভরে গেছে সতেজ সবুজ পাতায়। ডালে ডালে উঁকি দিচ্ছে নতুন কুঁড়ি আর ফুল। কোকিলের কুহু ডাক আর আম্রমুকুলের মৌ মৌ গন্ধ স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত এসে গেছে।
প্রতিবছরই ফাগুনের প্রথম সকালে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতো সিলেটবাসী। কিন্তু এবার কোনো আনুষ্ঠানিক উৎসব ছাড়াই দিনটি পার করছে এ অঞ্চলের মানুষ। তবে বসন্ত বরণে উৎসব না হলেও ঘরে বসে নেই তারা। বাসন্তী পোশাকে সেজে ঠিকই সকাল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এসেছেন রাস্তায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বরস্বতী পূজায় অংশ নিয়ে বসন্তবরণের আমেজ কিছুটা হলেও মিটিয়ে নিচ্ছেন তারা। আর এর মাধ্যমেই ফুটে উঠেছে বাঙালিয়ানার অসাম্প্রদায়িক চেতনা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ, মালনীছড়া চা-বাগানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন পূজামণ্ডপে গিয়ে উৎসবে অংশ নিচ্ছেন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ।
মাথায় ফুলের খোঁপা আর বসন্তের পোশাক পরে বান্ধবীদের সঙ্গে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বেড়াতে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিনা জেরিন। শাবির মূল রাস্তায় সেলফি তুলতে ব্যস্ত তারা। এসময় তাদের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
তিনি বলেন, বসন্তবরণে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি বলে তো আর আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই বান্ধবীদের নিয়ে বেড়াতে এসেছি এখানে। তাছাড়া এর আগে পূজামণ্ডপে গিয়ে উৎসবের আমেজ খুঁজে নিয়েছি।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটে মূলত দু’টি সংগঠন বসন্তবরণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকে। এবার পহেলা ফাল্গুনে কোনো অনুষ্ঠান না করলেও আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি শিল্পকলা একাডেমির বসন্তবরণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।
তাছাড়া এমসি কলেজের সাস্কৃতিক সংগঠন মোহনা’র আয়োজনে বসন্ত উৎসব ১৩ ফাল্গুন (২৫ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সদস্য সুলতান মোহাম্মদ নাসির।
আবহমান বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য ঋতু বসন্ত। তাই এ ঋতুকে বলা হয় ঋতুরাজ। বঙ্গাব্দের শেষ দু’মাস ফাল্গুন ও চৈত্র মিলিয়ে বসন্ত ঋতু। বাংলার প্রকৃতি, আমাদের ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বড় স্থান দখল করে রয়েছে বসন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬
এএএন/এসএস