ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পবায় দুই কিশোরকে ঘরের মধ্যে নির্যাতনের পর ভিডিও!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
পবায় দুই কিশোরকে ঘরের মধ্যে নির্যাতনের পর ভিডিও!

রাজশাহী: রাজশাহীর পবা উপজেলায় দুই কিশোরকে বেঁধে কয়েকজন মিলে পেটানো ও সেই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূলত চুরির অপবাদ দিয়ে ওই দু’জনকে নির্যাতন করা হয়েছে।



তারা হলেন- জাহিদ হাসান (১৫) ও ইমন আলী (১৩)। জাহিদ পবার চৌবাড়িয়া এলাকার ইমরানের ছেলে ও বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। আর ইমনের বাবা মাসুদ রানা। তবে তার বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। তার অভিভাবক দাদা মকবুল।

ঘটনাটি শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঘটে। আহত ওই কিশোরের মধ্যে জাহিদ হাসানকে পবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। আর আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে ইমন। এদিকে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে জাহিদ হাসানের বাবা ইমরান বাদী হয়ে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নির্যাতনকারীরা এরই মধ্যে নানাভাবে তৎপরতা শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে পবার চৌবাড়িয়া এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে রাকিবের একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। ওই ফোন চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে প্রথমে ইমনকে ধরে নিয়ে যায় ফজলুর লোকজন। এর পর বিকেল ৩টার দিকে নানার বাড়ি বিরসইল গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার সময় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় জাহিদ হাসানকে।

এর পর ফজলু তার বাড়ির একটি কক্ষে আটকে রেখে দুই শিশুকে ধরে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। সঙ্গে ছিলেন পলাশ, নাসির উদ্দিন, জামাল, রাজ্জাক, অনিক ও তুহিনসহ কমপক্ষে ১০/১২ জন। তাদের মধ্যে একজন মোবাইল ফোনে ওই নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করেন। তবে তিনি দুই শিশুকে মারপিট করেননি।

ভিডিওতে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে বিছানায় ফেলে হাত রশি দিয়ে বেঁধে জাহিদকে নির্যাতন করা হয়। আর ইমনকে বসিয়ে রেখে মারা হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে তাদের ওপর চলে বর্বর নির্যাতন। পরে দুই শিশু মোবাইল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর আতঙ্কে ইমন বাড়ি ছেড়ে রাতেই পালিয়ে যায়। আর জাহিদকে তার পরিবারের লোকজন পবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন।

আহত জাহিদ হাসান জানান, তাকে নির্যাতনকারীদের মধ্যে নাসির উদ্দিন একটি বাহিনীতে কর্মরত। তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। তিনিও এক পর্যায়ে জাহিদকে মারপিটকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। নির্যাতনের ওই দৃশ্যে নাসিরকেও দেখা গেছে। সে হাতে লাঠি নিয়ে দুই শিশুকেই বেদম প্রহার করছে। আর দুই কিশোর চিৎকার দিচ্ছে।

জাহিদের বাবা ইমরান অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর থেকে নির্যাতনকারীরা হুমকি দিচ্ছেন।

রাজশাহীর পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দুই কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগটি আমরা শনিবার সন্ধ্যায় পেয়েছি। রাতে তা মামলা হিসেবে গ্রহণের পর নথিভুক্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান শুরু করেছে বলেও উল্লেখ করেন ওসি।

বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
এসএস/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।