ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভ্যালেন্টাইনস ডে স্পেশাল

...ভালোবাসি পরাণ ভরি

হুসাইন আজাদ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
...ভালোবাসি পরাণ ভরি ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আজ হৃদয়ে হৃদয় দেওয়ার দিন। মায়ার চোখে কাতর চোখ রেখে দুরু দুরু বুকে ভালোবাসা প্রকাশের দিন।

হাতে হাত রেখে অনন্ত পথ হাঁটার দিন। কাঁধে মাথা রেখে সাত আসমান, সাত সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখার দিন। করতালে সুর তুলে ভালোবাসার জয়গান গাইবার দিন। শুভ্র সকাল, রূপালি দুপুর, স্নিগ্ধ বিকেল আর মায়াবী রাত- আজ পুরোটাই শুধু ভালোবাসার। আজ ভালোবাসার দিন। রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে।

ভালোবাসার কোনো রঙ নেই। নেই জাত-পাত কিংবা দর-মূল্য। ভালোবাসা আবেগের। উচ্ছ্বাসের। আকাশসম নির্ভরতার। সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির। হৃদয়ে হৃদয় মাখামাখির। প্রেম-ভালোবাসার এমন আবেগ-উচ্ছ্বাস বয়ে যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘মানসী’ কাব্যগ্রন্থে; “যত গোপনে ভালোবাসি পরাণ ভরি/পরাণ ভরি উঠে শোভাতে/যেমন কালো মেঘে অরুণ-আলো লেগে/মাধুরী উঠে জেগে প্রভাতে। ”

সমান আবেগ ঝরে প্রেমের কবি নজরুলের গানে, “মোর প্রিয়া হবে এস রানী/ দেব খোপায় তাঁরার ফুল/ কর্ণে দোলাবো তৃতীয়া তিথি/ চৈতী চাঁদের দুল। । ...আমার গানের সাতসুর দিয়া/ তোমার বাসর রচিব ও প্রিয়া/ তোমারে ঘিরিয়া গাহিবে/ আমার কবিতার বুলবুল। । ”

জগতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অর্ধেকেরও বেশিভাগজুড়ে কেবল এই ভালোবাসা, এই প্রেম, এই অদ্ভূত অনুভূতি। জগৎ সৃষ্টির পর যতো যুদ্ধ-বিগ্রহ বেঁধেছে তারও বেশিরভাগ হয়েছে এই প্রেম-ভালোবাসার অন্ধ-ঘোর লাগা অনুভূতির কারণে। যতো অসম্ভব সম্ভব হয়েছে, যতো অজেয় জয় হয়েছে, তাও এই ভালোবাসার তুমুল শক্তিতে।

সেই ভালোবাসার দিন বাঙালি বরাবরের মতো এবারও উদযাপন করবে চিরায়ত সুন্দর আর প্রেমের প্রতীক ঋতুরাজ বসন্তের দ্বিতীয় দিন। আগুনে ফাগুন যে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে গেছে বসন্তের প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিনে তা হয়ে যাবে ভালোবাসার লাল গোলাপ। ভালোবাসার এ উৎসব ছুঁয়ে যাবে রাজধানীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শান্ত শোবার ঘর থেকে সবুজ গ্রাম-বাংলার জীর্ণ কুঁড়েঘরও।

সারাবছরে বলি বলি বলেও যে কথা বল হয়নি, আজ এ বিশেষ দিনে সেই স্বপ্নের গল্পের ঝাঁপি খুলে বসবে মনোগাঙে পাড়ি জমানো যুগল-দম্পতি। উদ্যানের সবুজ গাছটির তলায়, শান্ত পুকুর পাড়ে অথবা বাগানের দু’টো ফুল গাছের ফাঁকে বসে সেই গল্পে গল্পে প্রেমের যুগল উড়াল দেবে স্বপ্নে সাজানো দু’জনের কল্পজগতে।

রাজধানী ছাড়িয়ে গ্রাম-বাংলার পথে পথেও সুর উঠবে কেবল ভালোবাসার। ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে রাজপথ-উদ্যান সবখানে।

প্রযুক্তির এ প্রজন্মে মোবাইল ফোনের মেসেজ, ফেসবুক, ই-মেইলসহ অনলাইন চ্যাটিংয়েও বাজবে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথা।

এদিনে সাধারণত প্রিয়জনকে চকোলেট, শুভেচ্ছা কার্ড, আংটি, প্রিয় পোশাক, ডায়েরি, খেলনা মার্জার বা বই ইত্যাদি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। উপহারের অনুষঙ্গ হয়ে উঠতে পারে নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটি গোলাপ, ফ্রেমে বাঁধা কোনো প্রিয় ছবি, ওয়ালমেট, ছোট্ট চিরকুট অথবা দু’ছত্র পদ্যও।

তবে, মনোগাঙে পাড়ি জমানো যুগলের ভালোবাসার দিনই নয় আজ। বরং সবারই ভালোবাসার দিন। মাকে সন্তানের, সন্তানকে বাবার, শিক্ষককে শিক্ষার্থীর, গুরুজনকে স্নেহভাজনের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসার কথা বলার দিন। ভালোবাসা প্রকাশের এ দিনে সন্তান মাকে প্রিয় রঙের শাড়ি অথবা চাদর, বাবাকে প্রিয় পাঞ্জাবি অথবা ফতুয়া, শিক্ষার্থী শিক্ষককে প্রিয় লেখকের বই ইত্যাদি উপহার দিতে পারেন। ক্ষুদেবার্তায় জানাতে পারেন না বলা শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-আবেগ অনুভূতির কথা।

যদিও ভালোবাসা কেবল একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়। ভালোবাসা প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবু ‘ভালোবাসিবারে দে মোরে অবসর’ হিসেবে একটি বিশেষ দিন ভালোবাসাবাসির জন্য হলে ক্ষতি কী!

বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।