ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাঘবিহীন রয়্যালের মোড় শ্রীহীন

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
বাঘবিহীন রয়্যালের মোড় শ্রীহীন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা শহর খুলনা। এ শহরে যারা এসেছেন তারা খুলনার প্রাণকেন্দ্র রয়্যাল মোড়ের দু’টি বাঘের ভাস্কর্য দেখে বাঘ দেখার তৃপ্তি নিয়েছেন।

সেই রয়্যাল চত্বর এখন বাঘহীন হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে রয়্যাল মোড়ের উন্নয়নের নামে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ২টি ভাস্কর্য তুলে নিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। আর সে থেকেই বাঘবিহীন শ্রীহীন মোড় হয়ে পড়েছে ভৈরব আর রূপসা নদীর পাড়ের খুলনার রয়্যাল মোড়।

রয়্যাল মোড় চার রাস্তার মিলনস্থল। খুলনার ঐতিহ্যবাহী চিংড়ির তিনটি ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দু’টি ভাস্কর্য দিয়ে এ মোড় সাজিয়েছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রয়াত মেয়র তৈয়্যেবুর রহমান। চিংড়ি তিনটিকে আধুনিকায়ন করে ফোয়ারা তৈরি করা হলেও বাঘ দু’টিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বর যেমন জনবহুল ও প্রাণকেন্দ্র তেমনি খুলনা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র রয়্যালের মোড়।

খুলনাবাসীর অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী রয়্যাল মোড়। এখানে প্রতিদিন তরুণ-তরুণীদের আড্ডা জমে সকাল-সন্ধ্যায়। অনেকে পরিবার নিয়ে বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে আসতেন বাঘ দেখাতে। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস ধরে শিশুরা আর দর্শনার্থীরা এ মোড়ে বাঘ দেখতে পারছেন না।
 
র‌য়্যালের মোড়ের বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড মো. বেলাল জানান, আগে মানুষ এখানে এসে বাঘের ঘাড়ে পিঠে চড়তো। সেলফি তুলতো। এখন আর  মানুষ এখানে এসে বাঘ দেখতে পান না। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন, বাঘ গেলো কোথায়।

একই সুরে মোড়ের ক্রেস্ট কর্নারের মাকসুদুর রহমান ও কালাম হোসেন বলেন, বাঘবিহীন রয়্যালের মোড় শ্রীহীন।

সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন বলেন, রয়্যালের মোড়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার নেই এটা ভাবাই যায় না।

তারা সবাই দ্রুত রয়্যালের মোড়ের বাঘ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৮৮৪ সালের ২৮ মে ‘দ্য ক্যালকাটা গেজেট’-এ প্রকাশিত খুলনা মিউনিসিপ্যালিটির প্রস্তাবিত চৌহদ্দি ছিল উত্তরে ভৈরব নদী, পূর্বে ভৈরব ও রূপসা নদী, দক্ষিণে মতিয়াখালী খাল ও লবণচরা খাল এবং ময়ূর নদীর উত্তরাংশ এবং পশ্চিমে বড় বয়রার দক্ষিণ-পূর্বাংশে, গোয়ালপাড়া এবং মুফগুন্নি (মুজগুন্নি)। এই চৌহদ্দির প্রায় মাঝ বরাবর অবস্থিত খুলনার রয়্যাল মোড়।

আশির দশকের পর খুলনা শহরের প্রথম দশতলা ভবন হয় রয়্যাল হোটেল। এর নাম অনুসারে মোড়ের নাম হয়ে যায় রয়্যাল মোড়।  

এ মোড়ের পাশের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ। আছে বিলাসবহুল হোটেল ক্যাসল সালাম, কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের বুথ, কয়েকটি মোবাইল কোম্পানির শো-রুম, দু’টি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়, দূরপাল্লার পরিবহনের কাউন্টার, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল।

প্রতিদিন এ মোড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দেখা মেলে। বিভিন্ন দেশ থেকে সুন্দরবন দেখতে এসে তারা অনেকেই ওঠেন হোটেল রয়্যাল কিংবা ক্যাসল সালামে। রয়্যালের মোড় থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে খানজাহান আলী (রা) সেতু (রূপসা সেতু)।

কেসিসির প্রকৌশল বিভাগের চিফ প্লানিং অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আবির-উল-জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, নগরীর ব্যস্ততম ২৬টি মোড়ে ট্রাফিক আইল্যান্ড, জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাথ ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক গতিরোধক নির্মাণসহ আধুনিকায়নের কাজ চলছে। যার মধ্যে খুলনার প্রাণকেন্দ্র রয়্যালের মোড়টিও রয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসে এ মোড়ের বাঘ দু’টি সরিয়ে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মোড়টির আধুনিকায়ন করে বাঘ দু’টি পুনঃস্থাপনের জন্য নকশা তৈরি করা হয়েছে। নকশা তৈরি করেছেন ব্রিটিশ নগর পরিকল্পনাবিদ রবার্ড গ্যালাহার। কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে টেন্ডার দেওয়া হলে কোনো সারা পাওয়া যায়নি। রি-টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এ কারণে বাঘ স্থাপনে দীর্ঘ সময় লাগছে। আশা করছি দু’তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।