ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইউপি নির্বাচন

বিদ্রোহীতে কোণঠাসা আ’লীগ

তুষার তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
বিদ্রোহীতে কোণঠাসা আ’লীগ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। হেভিওয়েট বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করতে এখন থেকেই হিমশিম খাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক মহলসহ দলীয় প্রার্থীরা।



জেলার ৩ উপজেলার ১৯ ইউপি নির্বাচনের ১৩টিতেই রয়েছে আ’লীগের হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থী। আর এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকরা দলীয় প্রার্থীতা ঘোষণার পর থেকেই নানাভাবে প্রতিবাদ করছেন।

মহেশখালীতে কলাগাছ রোপনের মধ্য দিয়ে এ প্রতিবাদ শুরু হয়। এরপর টেকনাফে কলাগাছ রোপনের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা। এ অবস্থায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠেকাতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত প্রথম ধাপের তফসিল মতে, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ করা হবে ২২ মার্চ। এতে টেকনাফের ৬ ইউনিয়নেই আওয়ামী মনোনীত প্রার্থীদের লড়তে হবে নিজ দলের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। কুতুবদিয়ায় ৬ ইউনিয়নের ৪টিতে আওয়ামী প্রার্থীকে লড়তে হবে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। মহেশখালী উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৩টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে নিজ দলের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হবে।

নির্বাচন অফিস ও দলীয় সূত্র জানায়, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের টিকেট পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম। কিন্তু দলীয় টিকেট না পেয়ে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন টেকনাফ উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমের ছেলে উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি শাহজাহান মিয়া।  

সাবরাং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সোনা আলী। তবে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি জাহেদ হোসেন ও টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন।  

হ্নীলা ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান এইচ কে আনোয়ার । তবে এখানেও রয়েছে তার হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থী। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ওই ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব মোরশেদ ও তার ভাই রাশেদ মো. আলী।

হোয়াইক্যং ইউপিতে আ’লীগের টিকেট পেয়েছেন ফরিদুল আলম জুয়েল। কিন্তু এখানে দলীয় প্রার্থী হতে না পেরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি জাফর আলমের ছেলে ইউনিয়ন আ’লীগের সহ সভাপতি মো. আলমগীর চৌধুরী।

সেন্টমার্টিনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মুজিবুর রহমান। তবে দলের টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুর আহমদ।

বাহারছড়া ইউনিয়নে আওয়ামী মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আজিজ উদ্দিন। কিন্তু এখানে রয়েছে আ’লীগের তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগ নেতা রফিক আহমদ, ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা মো. সাইফুল্লাহ ও হাবিব উল্লাহ।

কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং ও লেমশীখালী ইউনিয়ন ব্যতিত ৪টি ইউপিতেই আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে বড়ঘোপ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সদস্য ছাবের আহমদ।

উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইয়াহিয়া খান কুতুবী। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মো. সিরাজদ্দৌল্লাহ।

আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নুরুচ ছফা। কিন্তু দলীয় টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আ’লীগ সদস্য কাইয়ুম উল ইসলাম। কৈয়ারবিল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের টিকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ আজমগীর। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে বাইরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী মুকুল।

মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী, ধলঘাটা, হোয়ানক ও কুতুবজুম ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। তবে ওই উপজেলার অন্য ৩টি ইউপিতে রয়েছে হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থী।

এর মধ্যে ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের টিকেট পেয়েছেন জিহাদ বিন আলী। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আ’লীগ সদস্য আব্দুস সামাদ। মাতারবাড়ী ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন এনামুল হক রুহুল। তার বিরুদ্ধে হেভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট মোস্তাক আহমদ। এছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ ও মো. রুহুল আমিন।  
 
কালারমারছড়া ইউনিয়নে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সেলিম চৌধুরী। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে তাকে একক প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় প্রতিবাদ। কলাগাছ রোপনের সেই শুরু। নানাভাবে আন্দোলন করে অবশেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি দলীয় মনোনয়ন পান তারেক বিন ওসমান শরীফ। তবে মনোনয়নপত্র জমাদানের একদিন পর তিনি দলীয় টিকেট পাওয়ায় এ নিয়েও রয়েছে আইনী জটিলতা। এখানে তারপরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনসারুল করিম।  

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, একক প্রার্থী নির্ধারণ করেছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা দলের শৃংখলা ভঙ্গের শামিল। যে বা যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য সময় রয়েছে। যারা দলের টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা দলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিবেন বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
টিটি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।